বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সহ ৪ জনের মরদেহ সনাক্ত

চকবাজার
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ও কবিতা আবৃতি শিল্পী রেহেনুম তারান্ন দোলা (২২)
পিবিএ, ঢামেক : চকবাজার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত অসনাক্ত লাশ গুলোর মধ্যে আজ আরো ৪টি লাশের পরিচয় সনাক্ত করেছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।
লাশগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পক্রিয়া চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। সনাক্তা হওয়ার খবর শুনেই মর্গে ভিড় করেন নিহতের স্বজনরা।
আজ সনাক্ত হওয়া লাশ গুলো হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ও কবিতা আবৃতি শিল্পী রেহেনুম তারান্ন দোলা (২২), রিকশা চালক গোলাম মোস্তফা মিয়া (৩৮), প্লাস্টিক কাচাকাল ব্যবসায়ী ফয়সাল সারোয়ার (৫৩) ও প্যাকেজিং ব্যবসায়ী হাজী ইসমাইল হোসেন (৬১)।
এছাড়া এর আগে সনাক্ত করে লাশ নিয়ে যাওয়া ৩জনের শরীরের রেখে যাওয়া কিছু অংশবিশেষও সনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তানজিল হাসান রোহান (২১), মিঠু ও নিপুর।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনাল (বিইউপি) এর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রেহেনুমা তারান্ন দোলা। পরিবারের সাথে ১৩৮/৯ আজিমপুর লালবাগ রোডের বাসায় পরিবারের সাথে থাকতো। তার বাবার নাম দলিলুর রহমান দুলাল। দলিল লেখক তিনি।
নিহত দোলার ছোট বোন মালিহা মেহরিন নুশা জানায়, শিল্পকলায় “প্রজন্মকণ্ঠ” নামের একটি সংগঠনে কবিতা আবৃত্তি শেষে বান্ধবী বৃষ্টির সাথে রিকশাযোগে বাসায় ফিরছিলো দোলা। চুড়িহাট্টা দিয়ে রিকশায় যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা ২ জনই। মর্গে এসেও লাশ সনাক্ত করতে না পেরে বাবার কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা নেয় সিআইডি। তবে এর আগেই ডিএনএ নমুনার মাধ্যমে বান্ধবী বৃষ্টির লাশ সনাক্ত হলেও দোলার লাশ সনাক্ত হয়নি। আজ তার বোন দোলার লাশ সনাক্ত করা হয়েছে। দুই বোনের মধ্যে বড় ছিলো দোলা। ছোটবোন আজিমপুর অগ্রনী স্কুলের এসএসসির ছাত্রী।
রংপুর পীরগঞ্জের ডাসারপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে গোলাম মোস্তফা মিয়া পেশায় রিকশাচালক। স্ত্রী জিয়াসমিন বেগম ও তিন ছেলে গ্রামে থাকলেও তিনি কামরাঙ্গীরচর শ্মশানঘাট এলাকায় থাকতেন।
নিহত মোস্তফার চাচা নয়ন জানান, শ্মশানঘাট এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজের রিক্সা চালাতেন গোলাম মোস্তফা। ঘটনার দিন গোলাম মোস্তফা ও আরেক রিকশা চালক সেলিম একসাথে রিকশা চালিয়ে চুড়িহাট্টা দিয়ে বাসায় ফিরছিল। দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে ওয়াহেদ মেনশনের একটু সামনে ছিলো সেলিম আরে তার পিছনে মোস্তফা। হঠাৎ বিস্ফোরণে মোস্তফা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ওখানেই অাটকে পড়ে মারা যান। আর সেলিমের মাথায় আঘাত পায়। তবে সে ওখান থেকে চলে আসতে সক্ষম হয়। এরপর সেলিমই মোস্তফার নিহতের খবর স্বজনদের জানান।
স্ত্রী ইয়াসমিন বেগম জানান, ৩ ছেলে জিহাদ (১২), জীবন (৭) ও জিসান (৬)। দুর্ঘটনার পর লাশ সনাক্ত করতে না পারায় দুই ছেলে ও স্ত্রীর কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর আজ লাশ শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে নিহত ফয়সাল সারোয়ার-এর ভাগিনা রাহাত জানান, চকবাজারের ৪১ নং হাজী বাল্লু রোডে থাকতেন ফয়সাল। তার বাবার নাম মৃত আবুল হায়াত। প্লাস্টিকের কাঁচামালের ব্যবসা করতেন তিনি। ঘটনার সময় মায়ের ঔষধ আনার জন্য ফার্মেসিতে গিয়েছিলেন তিনি। তার লাশ সনাক্তের জন্য দুই মেয়ের ও স্ত্রী ফাতেমা আক্তারের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
আরেকজন চাদপুর হাজিগঞ্জ উপজেলার মৃত হাজী ইসমাইল হোসেন। মিরপুর মধ্য পীরেরবাগ ১১৩/২ নাম্বার বাসায় থাকতেন তিনি। ৩ সন্তানের জনক ছিলেন ইসমাইল। লালবাগে নিউ কালার প্যাকেজিং নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিলো তার। লালবাগ প্লাস্টিক মার্কেট সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকেই বের হয়ে চুড়িহাট্টার ওই রাস্তা দিয়ে হেটে কোথাও যাচ্ছিলেন তিনি। ওই সময়ই দুর্ঘটনার শিকার। ছেলে মোঃ সোহরাব হোসেন এসব কথা জানান। এই ছেলের কাছ থেকেই ডিএনএ নমুনা নেয়া হয়েছিলো।
ছেলে জানান, বাবার লাশটি মিরপুরে এলাকাতে নিয়ে যাবেন। এরপন জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।
চকবাজার থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আব্দুল লোকমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ ৪ টি লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এছাড়া এর আগে নিয়ে যাওয়া ৩ টি লাশের কিছু রেখে যাওয়া অংশবিশেষও হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, এরআগেও ডিএনএ’র মাধ্যমে ১১ টি লাশ সনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পিবিএ/এইচএ/জেডআই

আরও পড়ুন...