চুরি-ছিনতাই-খুন প্রতিরোধে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে র‍্যাব: ডিজি

দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব ফোর্সেস কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করণে মহাপরিচালক র‌্যাব ফোর্সেস’র মতবিনিময়।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে র‍্যাবের টহল ও চেকপোস্ট পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব ফোর্সেস কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করণে সাংবিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। উক্ত মতবিনিময় সভায় র‌্যাব ফোর্সেস এর অতিরিক্ত মহপরিচালক (অপারেশনস), পরিচালক, লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং, র‌্যাব ফোর্সেসের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মহাপরিচালক, র‌্যাব ফোর্সেস মহোদয় মতবিনিময় সভার শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন তাদের সুস্থ্যতা কামনা করেন। সেই সাথে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে আরও স্মরণ করেন সে সকল দেশপ্রেমী, অকুতোভয় র‌্যাব সদস্যদের যারা দুঃসাহসিক অভিযাত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শান্তির ভিত রচনায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে অমর হয়ে রয়েছেন।

র‌্যাব বাংলাদেশের এলিট ফোর্স হিসেবে জন্মলগ্ন থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, মাদকবিরোধী কার্যক্রম, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি দমন, চরমপন্থি, জলদস্যু ও সন্ত্রাস দমন, কিশোর গ্যাং নির্মূল, সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-ের আসামি গ্রেফতারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন। পাশাপাশি র‌্যাব ফোর্সেসে দেশমাতৃকার সেবায় যে সকল অকুতোভয় বীর সদস্য আত্মেৎসর্গ করেছেন এবং সহস্ত্রাধিক র‌্যাব সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন তাদেরকেউ স্মরণ করেন।

তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল হামলা ও নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ সাধারণ মানুষের উপর নৃশংস কায়দায় হামলা ও আক্রমণ চালাচ্ছে। উক্ত অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে র‌্যাব ফোর্সেসও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে। যার অংশ হিসেবে সারা দেশে র‌্যাব নিম্নে বর্ণিত কার্যক্রম পরিচালনা করছেঃ

ক) র‌্যাবের সকল ব্যাটালিয়ন সমূহ তাদের নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট পেট্রলিং পরিচালনা করছে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ/গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিরতিহীনভাবে অতিরিক্ত টহল মোতায়েনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

খ) ব্যাটালিয়নসমূহ নিজস্ব কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সাথে সমন্বয় সাধন করে ঢাকাসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।

গ) দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশীর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য র‌্যাব বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘ) যেকোন উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহে চেকপোস্ট স্থাপন, পর্যাপ্ত সংখ্যক টহল মোতায়েন এবং সাদা পোষাকে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। সকল মেট্রোপলিটন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরসমূহে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে।

এছাড়াও গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ হতে “অপারেশনস্ ডেভিল হান্ট” এর মাধ্যমে র‌্যাব ফোর্সেস রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে দেশব্যাপী চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী, পরিকল্পনাকারী এবং তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার জন্য মেট্রোপলিটন এলাকাসহ জেলা পর্যায়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ হতে অদ্যবধি পর্যন্ত রাজধানী হতে ৪০ জন, ময়মনসিংহ ২৫ জন, রাজশাহী হতে ২৪ জন, সিলেট হতে ১৭ জন, নারায়নগঞ্জ হতে ১৫ জনসহ সর্বমোট প্রায় ২ শতাধিক (১৮০ জন) আসাসিকে গ্রেফতার এবং রাজশাহী হতে ০১টি ওয়ান শুটার গানসহ ০১ রাউন্ড গুলি এবং সিরাজগঞ্জ হতে পরিত্যক্ত ০১টি ককটেল সদৃশ বোমা উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এছাড়াও সারাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ যেকোন ধরণের নাশকতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য কর্তৃক খুন, হত্যাচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারী এবং চাঞ্চল্যকর সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এ সকল গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’ এর প্রধান মোঃ আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কব্জিকাটা আনোয়ার, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ সন্ত্রাসী বুনিয়া সোহেল এবং জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারী সেলিম আশরাফি ওরফে চুয়া সেলিমসহ তাদের সহযোগীদেরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উল্লেখিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম দমনে র‌্যাব তার নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা নজরদারি এবং আভিযানিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

আরও পড়ুন...