পিবিএ, চাঁদপুর : চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতু সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী’র বিরুদ্ধে ৩০% কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, নির্মানাধীন এম এ ওয়াদুদ সেতুর রাস্তা প্রসস্ত করনে সরকারী অধিগ্রহণকৃত ভূমি মালিক গরীব কৃষকদের কাছ থেকে রামপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী ৩০% কমিশন আদায়ের উদ্দেশ্যে জোরপূর্বক (সাদা) নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামের বগার গুদারা হয়ে ভাষা বীর এম এ ওয়াদুদের নামে একটি সেতু নির্মাণ কাজে বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি চাঁদপুর। সেতুটির রাস্তা প্রশস্ত করণে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় ৪ শতক ভূমি সরকার বাজার মূল্যে অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রয় করে সেখানে সেতুটি নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জমির ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুনের দ্বারস্থ হন। চতুর ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন ক্ষতিগ্রস্থ গরীব ও অসহায় ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাদা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের জানান, ৩০% কমিশন ছাড়া টাকা পাওয়া যাবেন। অসহায় মানুষগুলো কিছু না বুঝেই চেয়ারম্যানের ছলচাতুরীতে পড়ে দ্রুত টাকার পাওয়ার আশায় ওই নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেন।
ভূক্তভোগীরা জানান, চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী জমির বিপরীতে ৩০% কমিশনের টাকার জন্য বিভিন্নভাবে হুমিক প্রদান করে আসছে। এমনকি টাকা না দিলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে টাকা আদায় করার হুমকী প্রদান করে। তাছাড়াও চেয়ারম্যান তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও হুমকী প্রদর্শন করছে। ভূক্তভোগীরা আরো জানান, চেয়ারম্যান আল মামুন রাতের বেলায় স্থানীয় মিজি বাড়ীতে ঢুকে বেশ কয়েক জন জমির মালিককে হুমকী প্রদর্শন করে ৩০% কমিশন দাবী করে। চেয়ারম্যান আল মামুনের অব্যহত হুমকীতে ভয় পেয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ভূক্তভোগিরা দলবদ্ধ হয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমানের কাছে মৌখিক অভিযোগ প্রদান করেন ভূক্তভোগী গরীব কৃষকরা। জেলা প্রশাসক তাদের অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমাকে এ বিষয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এরপর এ বিষয়ে তদন্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে মামুন নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার কথা স্বীকার করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা ভূমি মালিকদের কাছ থেকে (সাদা) নন জডিশিয়াল স্ট্যাম্প তার দফতরে জমা দেওয়ার নিদের্শন প্রদান করেন। পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জামাল হোসেন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমাসহ সংশ্লিস্ট দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা নির্মানাধীন ব্রীজ এলাকা পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন যাদের কাছ থেকে সাদা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন তারা হলেন, মৃত গোলাম আলী বেপারীর ছেলে আ. রব, মৃত আ. গফুর খানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন গং, মৃত ইসমাইল খানের ছেলে কামরুজ্জামান বাবুল গং, মৃত ইদ্রিস মিজির ছেলে আবু তাহের মিজি, ইদ্রি মিজির ছেলে নাজির মিজি, ছলিম উদ্দিন মিজির ছেলে হারুন মিজি ও রুহুল আমিন মিজি, আ. লতিফ মিজির ছেলে সফিউল্যাহ মিজি, মৃত আ. মান্নানের ছেলে অসিম উদ্দিন, সেরাজুল হকের ছেলে শাহাদাত হোসেন ও মনির হোসেন, মৃত আ. মান্নান মিজি, মো. সালাহউদ্দিন, গিয়াসউদ্দিন, আজাদ ও মাসুদ এছাড়াও আরো অনেকে পরে স্বাক্ষর দেবে বলে চেয়ারম্যানকে আশ্বাস প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন পাটোয়ারী জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। আমি কোন কৃষককে হুমকি দেইনি। কারো কাছ থেকে নন (সাদা) জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিইনি। এগুলো সব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এদিকে এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা জানান, রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল মামুন তার দোষ শিকার করেছে। সে কৃষকের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া (সাদা) ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প আমাদের কাছে ফেরত দেয়ার কথা বললেও এখনো কোন স্ট্যাম্প জমা দেয়নি। এ কর্মকর্তা আরো জানান, এ বিষয়ে উচ্চতর একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও অভিযোগকারীদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছে ভূমি অধিগ্রহণের চেক হস্তান্তর করা হচ্ছে।
পিবিএ/জিজি