প্লাবন শুভ : করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মরণব্যাধি এক অভিশাপ। বিশ্বব্যাপী রূপ নিয়েছে রণক্ষেত্রের। এ রণক্ষেত্রে নেই কোন অস্ত্র কিংবা নেই কোন দেশের সাথে কারো দাঙ্গা। এ রণক্ষেত্র প্রাণ বাঁচানোর রণক্ষেত্র। এখানে বিশ্ব থমকে পড়েছে। ক্ষমতাশালী দেশগুলো আজ কুপোকাত। পুরো বিশ্বে চলছে সহায়তার কাজ। বাংলাদেশও এ প্রার্দুভাব। বাংলাদেশেও চলছে বিভিন্নভাবে গরীব ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো সময়। এখন সময় মানবতার পরিচয় দেওয়ার। সহায়তা না-কি মহৎ কাজ। এর গুণ বহুগুণে। মানুষ মানুষেরই জন্যে। অস্বচ্ছল মানুষের দুঃসময়ে বৃত্তবানরাই পাশে দাঁড়াবে।
সম্প্রতি আমাদের দেশে করোনার প্রার্দুভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের সাথে সাথে মধ্যবিত্তরাও। গরীবদের হাত পাতার অভ্যাস থাকলেও মধ্যবিত্তদের অবস্থা যেনো বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। না খেয়ে জীবনযাপন করলেও পারছেন না কাউকে মুখফুটে বলতে একটু খাদ্যসামগ্রী দিতে। আর কেউ কেউ মুখ ফুটে বললেও পারছেন না সামগ্রী বিতরণকালে সেখানে যেতে।
কারণ ওই যে, বিতরণ ১ টাকা কিন্তু প্রচার ১ হাজার টাকার। দুঃসময়ে বহুল প্রচার-প্রচারণা করে সামগ্রী বিতরণ। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল। এ যেনো এক প্রতিযোগিতা চলছে বিতরণকালে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে সোস্যাল মিডিয়াতে প্রচারণা চালানো। ১ টাকার সামগ্রী দিয়ে ১০০ ভাবে ফটোসেশন। বিতরণকালে জমছে সমাগম। যা পুরোপুরিভাবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা উপেক্ষা করে এক ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী একজনের হাতে তুলে দিতে ধরে থাকছেন ১০-১৫ জন। চলছে ফটোসেশন পর্ব। ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির এভাবেই ছবি তুলে প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে সংবাদপত্র-টিভিসহ, ফেসবুক, হোয়াটস এ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপি, টুইটারসহ অসংখ্য সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।
আমাদের সমাজ আসলে এখন রোগাক্রান্ত। এ রোগ কোনো শারিরীক না, এ রোগ মানসিক রোগ। এখানে কেউ মানবতা দেখায় না, করে নিজের প্রচারণা। এ প্রচারণাগুলোর কারণে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চাইলেও পারছেন না সহায়তা গ্রহণ করতে। সমস্যা ওই যে, ‘চক্ষুলজ্জা’। আসলে আমরা বাঙালি কোনদিনো পারবো না এ রোগমুক্ত হতে। এ রোগ সমাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ভিন্নভাবে। সহায়তা করার থাকলে মন থেকে করুন। প্রচারণা করবেন না। ধর্ম বলে সহায়তা প্রকাশ না করতে। সহায়তা প্রচারণার কোন বিষয় নয়।
আসুন মানসিকতা বদলাই। প্রচারবিমুখ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই। কে কতোজনের মাঝে বিতরণ করতে পারলাম সে প্রচার বন্ধ করি। বিশ্ব এখন দুঃসময় পার করছে। এই দুঃসময়ে আপনার সহায়তাই পারে একজন অনাহারের পেট ভরাতে। ছবি তুলে প্রকাশ করে এই গরীব ও দুস্থদের আর লজ্জা দিবেন না। এই বৈশ্বিক অভিশাপ থেকে পৃথিবী মুক্ত না হওয়া অবধি মানবতা প্রকাশ করুন।
নিজেদেরকে মানুষ পরিচয় দিন এবং গরীব ও দুস্থদের মানুষ ভাবুন। ক্ষুধামুক্ত করে তাদের ছবি প্রকাশ করবেন না। আপনার সহায়তায় কারো পরিবার দুই মুঠো খাবার লাভ করছে। কিন্তু ভেবে দেখেন আপনার একটি ছবি প্রচারে বিশ্ব ওই মানুষটির ছবি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। সবাই দেখছেন তারা সহায়তা গ্রহণ করছেন। খাদ্য অভাবের লজ্জা আর দিবেন না দয়া করে। পেটে ক্ষুধা না থাকলে ওই ফটোসেশনে কেউ দাঁড়াতেন না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনি দেশ ও জাতির জন্য যা করছেন তা অকল্পনীয়। যেখানে বড়বড় দেশগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সেখানে আপনি এই করোনা মোকাবিলার যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। আপনাকে সাধুবাদ জানাই। আর আপনার কাছে বিনীত নিবেদন করি, এই প্রচারণাগুলো নজরদারির ব্যবস্থা নিন। অনেক অসহায় মানুষ প্রচারণার কারণে সহায়তা গ্রহণ করতে পারছেন না।
লেখক : কলামিষ্ট ও গণমাধ্যমকর্মী