ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি সত্ত্বেও বিক্ষোভে অনড় শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনে তাঁবু ভেঙে দেওয়া, আটক, হুমকি, ছাত্রত্ব বাতিল—এত কিছুর পরও যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছেই। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে অনড় শিক্ষার্থীরা। দেশটির দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ চলছে। মার্কিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে আরও অন্তত এক ডজন দেশে।

বিক্ষোভ দমনে বল প্রয়োগ করছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গতকাল রোববার ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত শনিবার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু ভেঙে দিয়ে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। একই দিন আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগোতে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে অন্তত ৬৮ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল।

গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ এবং ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে গত ১৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলকে যেভাবে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তা বন্ধেরও দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, হামলা বন্ধে বাইডেনকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরুর পর দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বার্তা সংস্থা এপির হিসাবে, ১৮ এপ্রিল থেকে অন্তত ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তাঁবু ভেঙে দিল পুলিশ

গতকাল রোববার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটার দিকে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসে ঢোকে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুগুলো ভেঙে দেওয়া হয়। তবে এ সময় কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট ক্যারল ফল্ট এক বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস দখল করে রেখেছেন। বিগত কয়েক দিন তাঁদের এই দখলদারি বিপজ্জনক দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। এ কারণে তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশ এসে মাত্র এক ঘণ্টায় সব তাঁবু সরিয়ে দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁবুর চারদিক ঘিরে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ তাঁবু ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আর যাঁরা স্বেচ্ছায় যাচ্ছিলেন না, তাঁদের জোর করে সরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে এর আগে গত মাসেও ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে সময় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে অন্তত ৯৩ শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল।

আমরণ অনশন

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কর্তৃপক্ষের চেষ্টার মধ্যেও আন্দোলন চলছে। নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থী রোববার আমরণ অনশন শুরু করেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। একই দাবিতে এর আগে ব্রাউন ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আমরণ অনশনে বসেছিলেন।

মাথায় ঐতিহ্যবাহী কেফায়া (ফিলিস্তিনিরা সাদা-কালো যে স্কার্ফ পরেন) পরে রোববার বিক্ষোভ করেছেন ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের ভাষণ অনুষ্ঠানও বর্জন করেন। এদিন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে পুলিশের মোতায়েন করা ড্রোন উড়ছিল।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের আয়োজন করেছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি নামে একটি সংগঠন। অ্যাডাম নামে এর এক সংগঠক বলেন, ‘মার্কিন শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে। ফিলিস্তিনিদের রক্তের বিনিময়ে কোনো চুক্তি আমরা আর মেনে নেব না।’

রোববার মিশিগান ইউনিভার্সিটি, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াসহ আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। মার্কিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, লেবানন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ চলছে।

আরও পড়ুন...