পিবিএ,ঢাকা: ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের বির্তকিত নেত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম জান্নাত আরা জান্নাত। ০২.০৬ এ তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, ‘আমি সজ্ঞানে সইচ্ছায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। এ পৃথিবীতে আসলে আমার কোন প্রয়োজন নেই। পরবর্তীতে স্ট্যাটাসটি তিনি ডিলিট করে দেন।
বির্তকিত এই ছাত্রলীগ নেত্রীর স্ট্যাটাস দেওয়ার পর থেকেই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের মধ্যে নানা রকম কানাঘুনা শুরু হয়েছে। আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে তিনি পদ পেতে জোর তৎপর ছিলেন। ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী খোজখবর নিতে বলায়, এই নেত্রীর ব্যাপারে নেতিবাচক রিপোর্ট এসেছে বলে জানা গেছে। কারণ তার পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বাবা ও ভাই নাশকতার মামলার আসামীও।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরা জানান, জান্নাত ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গেযুক্ত হন। এর আগে কখনো ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে তাকে দেখা যায়নি। বরং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকার টিকবে না, এমন ধারণা থেকেই সে ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে যায়নি। কিন্তু সরকার টিকে যাওয়ায় ‘সরকারি চাকুরি’ পাওয়ার বাসনায় সে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয় এবং খুব সহজেই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নিঝুমের ঘনিষ্টজন হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের দেখভাল করেন এমন কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার বাসা-বাড়ীতে যাওয়া আসা বাড়িয়ে দেন। তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদ এসএম জাকির হোসাইনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হন। জাকিরকে নিয়ে দিনের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি স্ট্যাটাস দিতেন। তার ফেসবুক চেক করলেই তথ্য পাওয়া যাবে। সে সময়ে ইডেন ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সময়ের যে রাতে কমিটি গঠন করা হয়, ওই রাতে আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা জাকিরকে ফোন করেন। আহ্বায়ক কমিটিতে জান্নাতকে ১২ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক করা হয়। শুরু হয় তার উত্থান পর্ব।
একটি সংস্থার রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের এ নেত্রীর পরিবার সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তার বাবা সামসুল আলম সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি। আপন ছোটভাই হুমায়ুন কবির সাফি ছাত্রদল নেতা। ছোট চাচা বাবুল আহমেদ তাড়াশ ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। চাচাতো ভাই এনামুল হক লিটন ছাত্রদলের সাবেক নেতা, বর্তমানে যুবদলের রাজনীতি করে। দুলাভাই ফরহাদ হোসেন তাড়াশ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ভাল পোষাক না পরতে দেখা গেলেও এখন প্রতি মাসে মাসে মোবাইলের মডেল চেন্জ করেন এ নেত্রী। গ্রামে একটি আলীশান বাড়ী করেছেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই। হলে সিট বাণিজ্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তদবির বাণিজ্য করে অনেক টাকা কামিয়েছেন। সম্প্রতি ফিলিং স্টেশনের অনুমোদনের জন্য জ্বালানি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দৌড়ঝাপ করেছেন ওই নেত্রী। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-ফিলিং স্টেশন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, এত টাকা কোথায় পাবে সে ? জবাবে সে জানিয়েছে, টাকার জোগার আছে-টাকা কোন সমস্যা না।
ইডেন ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী জানান, ২০১৬ সালে রাজনীতিতে জড়িয়েই সে কিছু নেতার কাছের মানুষ বনে যান। একসময়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে না পারা বির্তকিত এ নেত্রী, যখন তখন হলে মেয়েদের ওপর গায়ে হাত তুলতো। সিট বাণিজ্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তদবির করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। আসন্ন ছাত্রলীগের পুনাঙ্গ কমিটিতে তিনি গুরুত্বপুর্ন পদে আসতে নানাভাবে তদবির করে আসছিলেন। কিন্তু গোপন রিপোর্ট খারাপ হওয়ায় তার সে আশায় ছাই পড়ে। এই হতাশা থেকেই নিজের ফেসবুকে আত্মহত্যার স্ট্যাটাস দিচ্ছে। অথবা প্রেম বিচ্ছেদের কারণেও এই ফেসবুক স্ট্যাটাস হতে পারে।
পিবিএ/এমএস