সোহাগ হাসান জয়, সিরাজগঞ্জ: গত ৪ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত স্কুল ছাত্র শাহিন শেখের (১৬) হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারী) বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিহত শাহিন সেখের বাবা বাবু শেখ বলেন, ভিক্টোরিয়া স্কুল থেকে গত ২০২৪ সালে এসএসসি পাশ করে। আমার ছেলে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো না। ৪ আগস্ট সকালে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় আমার ছেলে শাহিন। যাওয়ার সময় বলে যায় আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিলে যাচ্ছে। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের চৌরাস্তা মোড় এলাকায় মিছিলে শাহিনকে দেখতে পায় অনেকে। এরপর থেকে শাহিন আর বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরে না আসায় অনেক খোঁজা-খুঁজি শুরু করি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, লোকমুখে শুনতে পারি আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিলে হামলা করেছে। ধাওয়া খেয়ে শাহিন আত্মরক্ষায় শহরের মুজিব সড়কের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আটকে পরে। পরে রাতে জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে একটি কক্ষে দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখি। তার মধ্যে একটি লাশ আমার শাহিনের ছিলো। কিন্তু পুলিশ না থাকায় লাশে আমরা হাত দেইনি। পরের দিন ৫ আগস্ট সকালে আবারও জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে আসি। এসে দেখি লাশ নাই। পরে জানতে পারি পুলিশ শাহিনের মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। শাহিনের শরীরের অধিকাংশ স্থান পুড়ে গেছে। গলা কাটা ছিলো। চেনার উপায় নাই। কিন্তু আমার ছেলের পরনের জুতা ও শরীরের উচ্চতা দেখে চিহ্নিত করতে পারি এটি শাহিনের লাশ। আমরা লাশ বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে আরো একজন লাশের দাবী করে। পরে পুলিশ কাউকে লাশ দেয়নি। পরে আমরা ৬ আগস্ট সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী করি (জিডি নং ২৪৭/২৪)।
এর পর পুলিশ গত সেপ্টেম্বর মাসে শাহিনের লাশের সাথে আমাদের ডিএনএ পরীক্ষা করায়। ৫ ডিসেম্বর ডিএনএ রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে পুলিশ। ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত হয় শাহিন আমার ছেলে। ৭ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে শাহিনের লাশ আমার হেফাজতে নেওয়ার জন্য সদর আমলী আদালতে আবেদন করি। পরে আদালত শাহিনের লাশ আমার হেফাজতে দিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়। গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) আমার ছেলের লাশ দাফন করি।
নিহত শাহিন সেখের বাবা বাবু শেখ আরো বলেন, আমার ছেলে শাহিন শেখ কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা কর্মী ছিলো না। সে একজন সাধারণ ছাত্র। ছাত্র হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় আমার ছেলেকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে জবাই করে হত্যা করে একটি কক্ষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করেছে। তাই আমার দাবী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই এবং হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। আমি এ বিষয়ে মামলা দায়ের করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। সরকারের নিকট এই হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্ত ন্যায় বিচার চাই। সংবাদ সম্মেলনের সিরাজগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।