ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে এক চোখ হারিয়েছেন বাবা

পিবিএ,পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: দুই যুগ ধরে ভ্যান চালিয়ে ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করত মাহাবুল। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে গুলিতে বাম চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য রাবার বুলেট।

১ ছেলে ও ১ মেয়ের পড়া-লেখা ও সংসার চালানো কঠিন হওয়ায় ঘটনার মাস তিনেক আগে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মেস্টা গ্রামের বাসিন্দা মৃত. সাদৎ খানের ছেলে মাহাবুল খাঁন স্বপরিবারে চলে আসেন গাজীপুরের বাইপাস এলাকায় ওঠেন ভাড়া বাড়িতে। চায়না কোম্পানীর ওভার ব্রীজ নির্মাণ কাজে শ্রমিক হিসেবে যোগদেন। ছাত্রদের শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার মধ্যে পড়ে চোখ হারিয়ে এখন দিশেহারা তিনি।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে মাহাবুল জানান, ২০ জুলাই শনিবার চায়না নির্মাণাধীন ওভার ব্রীজের কাজ করতে গিয়ে জানতে পারেন আজ কাজ বন্ধ। ভাড়া বাসায় ফিরে দেখেন উচ্চ মাধ্যমিক পড়–য়া ছেলে মাসুম খান কোটা আন্দোলনের মিছিলে গেছেন। ছেলেকে খুঁজতে বাসা থেকে বের হয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাইপাস ওভার ব্রীজের মাথার কাছে পৌছামাত্রই পুলিশের বারার বুলেট মুখ,চোখ ও মাথাসহ শরীরে লাগে। লোকজন ধরাধরি করে প্রথমে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা অপারগতা প্রকাশ ডাক্তার। পরে জয়দেবপুর সদর হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় গ্রামের বাড়ি আসি। টাকা-পয়সা জোগাড় করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই ডাক্তার জানান এখানে চিকিৎসা হবেনা। পরে ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে দু’দফা অপারেশনের পর চোখের ৬টি গুলি বের করা সম্ভব হলেও দৃষ্টি শক্তি ফেরত হওয়ার সম্ভাবনা নাই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর কোন দিন চোখে দেখতে পারবোনা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এখনও ১টি গুলি চোখের ভিতর আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাথা ও শরীরে থাকা একাধিক গুলি বের করা হলেও এখনও মাথায় অসংখ্য গুলি আছে। সে গুলোর যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারিনা।

ছেলে মাসুম জানান, আমাকে খুঁজতে গিয়ে বাবা আজ অন্ধ হয়েছে। চিকিৎসা ছাড়া আর কোনো সরকারি সহয়তা আমরা পাইনি। বর্তমানে টাকার অভাবে বাবাকে ভালো করে চিকিৎসা করাতে পারছিনা।

মাহাবুল বলেন, অপারেশনের জন্য ঢাকায় যাওয়া দরকার কিন্তু হাতে কোনো টাকা-পয়সা নাই। ধারদেনা করে চলছি। ঠিক মত ঔষুধ পাতি কিনতে পারছিনা। টাকার অভাবে পরিবার নিয়ে এক প্রকার খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। আমি সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা বেগম বলেন, বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত ওই ব্যক্তির খোঁজ খবর নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন...