আন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গে আ’লীগ ভেসে যাবে: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যে উত্তাল তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে এই আন্দোলনের তরঙ্গে আ. লীগ ভেসে যাবে। ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি গার্মেন্টসের সূচনা করেছিলেন। তিনি শ্রমিক ভাইদের বিদেশে পাঠানো শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে রেমিট্যান্স আসছে। আর এখন ওই রেমিট্যান্সের টাকা মেরে খাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগ একটা চোরের দল। এটা আমার কথা না, কথাটা তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯৭৪ সালে যখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে দুর্ভিক্ষ শুরু হলো (আমাদের দুর্ভিক্ষের কথা তার মেয়েও বলতে শুরু করেছেন) সেই দুর্ভিক্ষের সময় তিনি বললেন, আমি আর কী করব, আমার তো সব চাটার দল আমার চারদিকে, চোরের দল। এতো কম্বল এলো বিদেশ থেকে আমার কম্বল গেল কোথায়। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের দুর্নীতি, তাদের চুরি-ডাকাতি এটা তাদের মজ্জাগত, প্রকৃতিগত। ২টা জিনিস আওয়ামী লীগের বডিকেমেস্ট্রিতে আছে- একটা হচ্ছে চুরি, আরেক হচ্ছে সন্ত্রাস। কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসবে, ধমক দেবে, হুঙ্কার দেবে। তোমাদের হুঙ্কারে বাংলাদেশের মানুষ ভয় পাই না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যে উত্তাল তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছে এই আন্দোলনের তরঙ্গের মাধ্যমে আ. লীগ ভেসে যাবে। তারা বড় বড় কথা বলে।’

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে বিএনপির সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশের ধারাবাহিকতায় আজ ময়মনসিংহ বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি। বেলা দুইটার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলাম।

সমাবেশে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত বুধবার চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় সমাবশ শুরু করে বিএনপি। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারকে রহমান বলেছেন- ফয়সালা হবে রাজপথে। আরেকটা কথা বলেছেন- টেক ব্যাক বাংলাদেশে। কেন বলেছেন? কোন বাংলাদেশক ফিরে চাই আমরা। আমরা সেই বাংলাদেশকে চেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি একটা তলাবিহীন ঝুঁড়ি বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মানুষকে। যারা বাকশাল করেছিল তাদের বাকশালকে বাতিল করে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এত বড় বড় কথা বলে আওয়ামী লীগের লোকেরা। কত লম্বা লম্বা কথা। আরে গণতন্ত্র তো তোমরাই ধ্বংস করেছ বারবার। ‘৭৫ সালে বাকশাল করে ধ্বংস করেছ, আবার এখন গণতন্ত্রের নামে ওই একনায়কতন্ত্র, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে তোমরা।’

‘উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে পাচার করে কানাডাতে বেগম পাড়া, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম, সিঙ্গাপুর বাড়ি, লন্ডনে বাড়ি কেনা তাদের একমাত্র কাজ। গণম্যাধ্যম ও ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছে সরকার। অর্থাৎ তারা যে কোনো সময় ইচ্ছা করলে এটাকে ট্র্যাক করবে, তারপর যে এটা করছে তাকে জেলে নিতে পারবে। আর শাস্তি ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এই আইনের আওতায় কয়েকদিন আগেই আমাদের বোন-সহকর্মী রাজবাড়ীর এক সোশ্যালকর্মীকে আমাদের মহিলা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দুটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তার স্বামী বিদেশে কাজ করেন। তিনি নাকি ফেসবুকের একটি জবাব দিতে গিয়ে সেখানে নাকি শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন। সেজন্য তাকে রাতে পুলিশ গিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। শেখ হাসিনার সমালোচনা এই গণতান্ত্রিক দেশে করা যাবে না? কারণ এটা গণতান্ত্রিক দেশ নয়, সেজন্য করা যাবে না। উনি কি গড, উনি কি বিধাতা, উনি কি ঈশ্বর যে তার বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করা যাবে না,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নিজেদের গড মনে করে, ঈশ্বর মনে করে, বিধাতা মনে করে তাদের ধারণাকে ভেঙে দিয়ে এখানে মানুষের রাষ্ট্র চালু করতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা বলেছিল ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে। কত টাকায় চাল খাচ্ছেন- ৯০ টাকায়। কৃষক ভাইদের বলেছিল, বিনা পয়সায় সার দেবে। সেই সার পাচ্ছেন কৃষক ভাইয়েরা? আরেক কথা বলেছিল তাতে আমাদের তরুণ-যুবকরা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। দিয়েছে? আপনারা চাকরি পান? আর যদি আ. লীগের লোক সই করে আর ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। না হলে চাকরি হয় না। বিচারালয়ে গিয়ে বিচার পান? বিচারবিভাগকে দলীয়করণ করছে, প্রশাসনকে দলীয়করণ করছে। পার্লামেন্টে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। ওরা শুধু ফ্ল্যাট নেয়, বিনা ট্যাক্সে গাড়ি নেয় আর সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। আমাদের জনগণের কোনো কথা হয় না। কারণ তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়।’

‘আমরা বাক স্বাধীনতার কথা বলি, আমরা লেখার স্বাধীনতার কথা বলি। কিন্তু এরা কী করেছে- অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন আইন তৈরি করে (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন) আমাদের সংবাদপত্রের ভাইদের লেখার ক্ষমতা বন্ধ করে দিয়েছে। সারাদেশে ত্রাস সৃষ্টি করেছে যে, আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে আমরা তোমাদের জেলে পুরে দেব। না হলে তোমাদের ফাঁসি দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে এই দেশের সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে, আমরা ৫ বছর পরপর ভোট দিয়ে সরকার পরিবর্তন করতে পারি, এটা আমাদের অধিকার, এই একটা দিনই আমরা দেশের মালিক- এই ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর কেউ আমরা ভোট দিতে যেতেই পারি না। আগের রাতেই ভোট করে ফেলছে। আবার প্রমাণিত হলো গাইবান্ধার উপনির্বাচন। খুব ঢোল বাজাচ্ছিল নতুন নির্বাচন কমিশন দিয়েছি, এই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। আমরা তখনই বলেছিলাম, সরকার যদি পরিবর্তন না হয়, দলীয় সরকার থাকলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেটা প্রমাণ হয়েছে। ১ হাজার ৩৮০টি নাকি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল, হাজার হাজার পুলিশ, র‌্যাব এমনকী সেনাবাহিনী পর্যন্ত। কিন্তু ওই নির্বাচন কমিশনকেই দুপুরের মধ্যে নির্বাচন বন্ধ করতে হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। সেই কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্ট তৈরি হবে, জনগণের সরকার তৈরি হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দাবি খুব পরিষ্কার- মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দেশে ফিরে আসতে দিতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে, এই মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। অবিলম্বে সভা-সমাবেশ ও মিছিলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।’

আরও পড়ুন...