জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় বিদেশিদের নিকট নালিশ করছে বিএনপি

ভোটের রাজনীতিতে মানুষের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় : কাদের

পিবিএ,ঢাকা: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াপনায় অবতীর্ণ হওয়ায় তারা এখন নালিশ নির্ভর দলে পরিণত হয়েছে। দেশের জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় তারা বিদেশিদের নিকট নালিশ করছে।’

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

গতকাল (রোববার) বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে বিএনপির নেতারা বৈঠক করেছিল। সেখানে বেশ কিছু নালিশ জানিয়েছিলেন তারা, এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? জবাবে কাদের বলেন, ‘বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াপনা অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। এখন আসলে নালিশ করাই তাদের রাজনৈতিক পুঁজি। নালিশই তাদের একমাত্র অবলম্বন।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, তারা সভা-সমাবেশ করে জনগণের কাছে নালিশ জানাতে পারত। বিচারক হতে পারে দেশের জনগণ। তারাই ভোট দেবে, তারাই আন্দোলন করবে। জনগণ রেসপন্স না করলে আন্দোলন হবে না, তারা ভোট না দিলে আমরা জিততে পারব না, এটাই বাস্তবতা।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি বিদেশিদের কাছে যতই ধরনা দিচ্ছে, ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে দেশের মানুষের প্রতি তাদের আস্থা কম। সে কারণে বিদেশ নির্ভর হয়ে পড়ছে। বিদেশিদের কাছে নালিশ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। যদি দেশের জনগণের প্রতি তাদের আস্থা থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে এত ঘন ঘন ধরনা দেয়া, নালিশ করা থেকে বিরত থাকত।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকবেই। কিন্তু রাজনীতিরও একটা ভাষা আছে। আমাদের রাজনীতিটা যাতে ডিভাইসিভ অ্যান্ড পোলারাইজড না হয়। আমরা খুব বেশি পোলারাইজড এবং ডিভাইসিভ হয়ে যাচ্ছি। সে মনোভাবটা যদি আমরা পরিহার করতে পারি, তাহলে এখানে গণতন্ত্রের বিউটি (সৌন্দর্য) বজায় রাখতে পারব।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করি, আক্রমণের ভাষার মধ্যেও একটা শালীনতা থাকতে হবে। যেমন ড. কামাল হোসেন সাহেব সম্প্রতি বক্তব্য দিতে গিয়ে খেই হারিয়ে তিন হঠাৎ বলে ফেললেন, এই সরকারকে লাথি মেরে নামাবে। আবার বললেন, লাথি মেরে এই সরকারকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবে। দুটি শব্দ উনি ব্যবহার করেছেন। এ দুইটি গর্হিত ভাষা। এটা রাজনীতির জন্য শোভন নয়।’

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তার মতো একজন প্রবীণ নেতা যদি লাথি মেরে সরকারকে ক্ষমতা থেকে তাড়াতে বলেন এবং সরকারের যারা আছেন তাদের লাথি মেরে বিদেশ পাঠাবেন এ ধরনের অশালীন ও অমার্জিত বক্তব্য রাখেন তাহলে তো রাজনীতির যে কালচারটা যেমন- সৌজন্যবোধ, সৌন্দর্যবোধ এবং রাজনীতিটাকে শালীন পরিমার্জিত ভাষায় নিয়ে আসা অসম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমারা যারা রাজনীতি করি প্রতিপক্ষকে আক্রমণে যৌক্তিক ভাষা ব্যবহার করব। আমরা ব্যক্তিগত ও অশালীন বক্তব্য থেকে বিরত থাকলে আমার মনে হয়, আমাদের বিভেদের মধ্যে মতান্তর থাকবে তবে মতান্তরের যেন মনান্তরে পরিণত না হয়। মতান্তর রাজনীতিতে থাকবেই, নানা মত নানা পথ থাকবে। কিন্তু মতান্তর আর মনান্তর এক বিষয় নয়। মনান্তরটা যদি আমরা পরিহার করতে পারি, তাহলে রাজনীতির পরিবেশটা আরও সুন্দর হবে। গণতন্ত্রের জন্য সেটা শুভ হবে।’

যুব ক্রিকেটারদের গণসংবর্ধনায় সকল রাজনৈতিক দলকে দেখা যাবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো মুজিববর্ষের ক্ষণ গণনায় সকল দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। অনেকেই এসেছিলেন, আবার অনেকেই আসেননি। ড. কামাল হোসেন কাদের সিদ্দিকী সহ অনেকেই এসেছেন। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিকদল বিএনপির সেখানে তাদের শুভবোধের পরিচয় দিতে পারত। এ ধরনের ঘটনাগুলো রাজনীতিতে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা বজায় রাখতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেমন বেগম জিয়ার সন্তান মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু গেট খোলা হলো না। এভাবে তো আমরা নিজেদেরকে ও কর্মক্ষেত্রে দেয়াল তুলে ফেলেছি। এই দেয়াল তোলার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো কাজ করে তা পরিহার করতে পারি। রাজনীতিতে সৌজন্যতা হারিয়ে যাচ্ছে, সেটা দুখের বিষয়। রাজনীতিতে সৌজন্যবোধ থাকা উচিৎ। আমরা এখন সবকিছুতেই মানি না মানব না। নির্বাচনের ফলাফল মানি না, আইনকানুন মানি না, নিজেদের পক্ষে না গেলে বিচার মানি না। এই যে মানি না সংস্কৃতি থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।’

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...