জবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

Jobi

পিবিএ, জবি : ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বের ঘটনার জের ধরে গতকাল রবিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বাস ভাঙচুর ও ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ক্যাম্পাসে একাধিক ককটেল বিষ্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়েল সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক শাহীন মোল্লাসহ প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য আহত হন।

হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কর্মীরা লোহার রড,লাঠি,হাতুরী,চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুগ্রুপেই ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে ক্যাম্পাসে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। জানা যায়, প্রেম ঘটিত তুচ্ছ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মী আসম আইয়ুব তুহিনকে ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান মুন, ১৩ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রিফাতসহ কয়েকজন মারধর করে। পরে সন্ধ্যায় সভাপতি তরিকুল ইসলামের গ্রুপের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নয়ন ও রিফাত তুহিনকে সুমনা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আসলে তাদের ওপর সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মীরা হামলা চালায়।

এর জেরে রবিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকের কর্মীরা গ্রুপের কর্র্মীরা একত্রিত হয়ে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে ও বিজ্ঞান ভবনের চত্বরে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে মহড়া দেয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা একে অপরকে ধাওয়া দেয়। এ সময় দুগ্রুপের কর্মীরা লাঠসোটা,লোহার রড,হাতুরী,চাপাতি হাতে একে অপরকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। সাড়ে এগাড়টার দিকে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে সভাপতি গ্রপের কর্মীরা তাদের আবার ধাওয়া করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পরে যায়। সহকারী প্রক্টর শাহীন মোল্লাসহ কয়েকজন ইটের আঘাতে আহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন,বিজ্ঞান ভবন ও ক্যান্টিনের সামনে কয়েকটি ককটেল বিষ্ফোরনের শব্দ শোনা যায়। ক্যাম্পাসের ভিতরে দাড়িয়ে থাকা চারটি বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসের ভিতরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা আবার ক্যাম্পাসে আসলে সভাপতি গ্রপের কর্মীরা তাদের ওপর ফের হামলা করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে পরিসংখ্যান বিভাগের শ্রেণী কক্ষের দরজা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী হেলমেট পরিহিত ছিল। তারা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোটর বাইকে থাকা হেলমেটে জোর করে কেড়ে নেয়। এদিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় রফিক ভবন ও অবকাশ ভবনের বারান্দায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ওপরও ইট-পাটকেল ছোড়ে। অবকাশ ভবনের তৃতীয় তলা সাংবাদিক সমিতি থেকে সাংবাদিকরা ঘটনার ছবি ও ভিডিও করতে চাইলে ছাত্রলীগের মেয়ে কর্মীরা সমিতির ভিতর প্রবেশ করে সাংবাদিকদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী খালিদ মাহমুদ সুজন (১৩ তম ব্যাচ),সামসুল হুদা গাজী (১৩তম ব্যাচ), মামুন (১২তম ব্যাচ), মাহফুজ (১২তম ব্যাচ), প্রান্ত (১২তম ব্যাচ), রেজওয়ান,ইশরাক চৌধুরী (১৪তম ব্যাচ),নোমানসহ ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, মিডপোর্ট হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার মেয়ে ঘটিত একটা বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে মারধর করে। রবিবার এ ঘটনার সমাধানে আমাদের নিজেদের মধ্যে বসার কথা ছিল। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা তার আগেই আমার কর্মীদের উপর আক্রমন করছে। আমি অসুস্থ্য থাকার কারণে ক্যাম্পাসে না আসায় পরে আমার ছেলেরাও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের ধাওয়া করে। পরে ক্যাম্পাসে সিনিয়র নেতাদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করি।’

জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন,‘পূর্বঘটনার জেরে মারামারির সুত্রপাত হয়। আমার কর্মীদের ওপর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা আক্রমণ করে। আজকের ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিবে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।’

কোতয়ালী জোনের এসি বদরুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলার সময় আমরা মাঝখানে অবস্থান নেই। এবং দুই পক্ষকে আলাদা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনি। এ সময় ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাহিরে অতিরিক্ত দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন ছিল।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে আগামীকাল জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান বলেন,‘আজকের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডিকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পিবিএ/এমআর/জিজি

আরও পড়ুন...