পিবিএ ডেস্ক: কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থামাতে অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় নিতে জাতিসংঘকে আহ্বান জানিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ। সেই সাথে জম্মু-কাশ্মীরে গণহত্যার সতর্কতা জারি করেছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে কাশ্মীরে গণহত্যার আলামত পেয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছে। খবর ডনের।
গণহত্যা প্রতিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে জারি করা ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভারতের কাশ্মীর ও আসামে গণহত্যার প্রাথমিক ১০টি ধাপ বা লক্ষণের কয়েকটি ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।
সংস্থাটি বলেছে, একতরফা ও অবৈধ পদক্ষেপের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উপত্যকায় এখন গণহত্যা চালানোর পথে রয়েছে।
বিবৃতিতে কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থামাতে অতিসত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ।
জেনোসাইড ওয়াচের প্রেসিডেন্ট গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টনের গণহত্যা বিষয়ক দশটি বিষয়ের আলোকে ওই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
১. জনগণের শ্রেণীকরণ: কাশ্মীরে ভারতীয় হিন্দু ও শিখ ধর্মাবলম্বী সেনাবাহিনীকে ভারত সরকার ‘আমরা’ এবং কাশ্মীরি মুসলিমদেরকে ‘তারা’ এই দুই ভাগে ভাগ করেছে।
২. প্রতীক চিহ্নিতকরণ: গণহত্যা প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ এবং এ ধাপে কাশ্মীরের নাগরিকদের প্রত্যেকের মুসলিম নাম, ভাষা, পোশাক এবং মসজিদকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
৩. বৈষম্য: ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণ করত হিন্দু পণ্ডিতরা। বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপি পুনরায় কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিতদের প্রভাব বৃদ্ধি করছে।
৪. অমানবিকতা: কাশ্মীরের মুসলমান নাগরিকদের ‘সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদী, অপরাধী, বিদ্রোহী’ নামে অভিহিত করার মাধ্যমে দানব হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
৫. সংগঠিতকরণ: ভারি আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রায় ১০ লাখ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং পুলিশকে কাশ্মীরে সংগঠিত করা হয়েছে।
৬. মেরুকরণ: প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিজেপি কাশ্মীরে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
৭. প্রস্তুতি: কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। যে কোনো মূল্যে কাশ্মীর নিয়ন্ত্রণকে ‘চূড়ান্ত সমাধান’ বলছে বিজেপি নেতারা।
৮. দমন-পীড়ন: কাশ্মীরের নাগরিকদের খাঁচাবন্দি করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তাদেরকে গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করা হচ্ছে।
৯. বিলুপ্তকরণ: ১৯৯০ সাল থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অন্তত ২৫টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। পাশাপাশি পঁচিশজনের বেশি মুসলমান বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।
১০. অস্বীকার: কাশ্মীরের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের দাবি করেছে মোদি সরকার। ক্ষমতাসীন বিজেপি কাশ্মীরে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য অথবা পুলিশ কর্তৃক কাশ্মীরের কাউকে নির্যাতন, হত্যা অথবা নিহতের চেষ্টার অভিযোগও অস্বীকার করে আসছে সরকার।
জেনোসাইড ওয়াচ ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বে গণহত্যা প্রতিরোধ, বন্ধ ও এ অপরাধের শাস্তির জন্য কাজ করে আসছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য গণহত্যা এবং সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে চেষ্টা করছে।
গত ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ) বাতিল করে দিয়েছে। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি অঞ্চল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছে।
কাশ্মীরী সংগঠনগুলো বলেছে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের অর্থ হলো সেখানকার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। ৩৭০ ধারা বাতিলকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরে গত ১৬ দিন যাবত কারফিউ জারি করে রেখেছে ভারতীয় প্রশাসন। বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে হিমালয় অঞ্চলটির সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণাকে সামনে রেখে কাশ্মীরের ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এই মুহূর্তে ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকীকৃত এলাকায় পরিণত হয়েছে। সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ সদস্য মিলিয়ে সেখানে ৭ লক্ষাধিক নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
অস্থায়ী কারাগার বানানো হয়েছে হোটেল, গেস্ট হাউস, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ভবনকে। কাশ্মীরের পুরো উপত্যকাটি যেন পরিণত হয়েছে একটি কারাগারে।
পিবিএ/বাখ