পিবিএ, জলঢাকা (নীলফামারী) : নীলফামারীর জলঢাকায় পল্লীতে পল্লীতে চলছে শোকের মাতম। কারণ, শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক দুর্ঘটনার কবলে পরে জলঢাকা উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৩ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে নয় জনের বাড়ী মীরগঞ্জ ইউনিয়নে। বাকী চার জন পার্শ্ববর্তী শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে। নিহতরা হলেন মীরগঞ্জ ইউনিয়নের শংকর চন্দ্র রায় (১৭), প্রশান্ত রায় দিপু (১৬), তরুন চন্দ্র রায় (১৬), রঞ্জিত কুমার (৩০), অমিত চন্দ্র (১৯), বিপ্লব চন্দ্র (১৫), সেলিম (১৫), মাছুম (১৬), মোরসালিন (১৫) শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কনক (৪০), বিকাশ (৩২), মনোরঞ্জন (১৭) ও মৃণাল (১৫)। এরা অধিকাংশই স্কুল পড়ুয়া ছাত্র।
সরেজমিন শুক্রবার সকালে ওই ১৩ পরিবারের বাড়ীতে গেলে দেখা যায় কান্না-আর্তনাদের রোল। তাদের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মীরগঞ্জ ইউনিয়নের নিজপাড়া কুড়ারপার গেলে নিহত শংকরের মা জনতা বালা ও নিহত প্রশান্ত রায় দিপুর মা গীতা রানী সন্তান হারিয়ে বিলাপ করে কাঁদছে। আর বলছে বুকের মানিকেরা কবে বাড়ী আসবে।ওরা যে যাবার সময় বলেছিল টাকা রোজগার করে সংসারের অভাব দুর করবে।সেসময় কথা হয় কুমিল্লা থেকে বাড়ীতে আসা তাদের সহকর্মী অনুকুল চন্দ্র রায়ের সাথে। সে জানায়, ‘আমরা এক সাথে কাজ করতাম।গত পরশুদিন আমি বাড়ীতে আসি। আসার সময় তারা বলেছিল, আমরা কয়েকদিন পর বাড়ী যাব। বাড়ীতে আসার সময় তারা পরিবারের জন্য অনেকেই অনেক কিছু আনতে চেয়েছিল ‘ ওই এলাকার দুর্ঘটনায় নিহত অমিত চন্দ্র রায়ের বাড়ীতে গেলে দেখা যায় তার মা সাবিত্রী সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ। বাবা কামিক্ষ্যা চন্দ্র বুকের ধনকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পরেছে। ভাই নারায়ণ চন্দ্র বলেন,দুই মাস আগে সহপাঠিদের সাথে রোজগারের আশায় পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু আজ কি হল।
একই গ্রামের নিহত রঞ্জিতের বাড়ীর চিত্রও এক।রঞ্জিতের স্ত্রী সচি রানী তার একমাত্র ১০ বছরের প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তান সাথী রানীকে নিয়ে বিলাপ করে কাঁদছে আর বলছে, এখন আমার সন্তানের ভবিষ্যত কি হবে?এভাবেই প্রতিটি নিহত পরিবারের বাড়ীতে দেখা গেছে এমন চিত্র। সেখানে কর্মরত নিহতদের সহকর্মী সুজন চন্দ্র মুঠোফোনে জানান, ভগবানের কৃপায় অল্পের জন্য মৃত্যু হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। সে মুহুর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোরে যখন কয়লাবাহী ট্রাকটি ভাটায় ঢোকে সে মুহুর্তে একটি ইট আমার গায়ে পড়লে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আমি দাড়িয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটি উল্টে ঘরের উপর পরে। আমিও অর্ধেক দেবে যাই। তখন অন্য সহকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে।’
মীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান হুকুম আলী বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর সাথেই সমবেদনা জানাতে পরিবারগুলোর বাড়ীতে যাই। আমি প্রতিটি পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরন দাবি করছি মালিকপক্ষের কাছে ‘ এদিকে নিহত পরিবারগুলোকে একই ক্ষতিপুরনের দাবি করেছেন শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুল হকও। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুজাউদৌলা বলেন, ‘এরই মধ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও চৌদ্দগ্রাম ইউএনও’র সাথে আমার কথা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ এখানে আসলে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হবে।’ এ মর্মন্তিক দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারগুলোর প্রতি শোক প্রকাশ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর রানা মোহাম্মদ সোহেল (অবঃ) বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের জন্য আমার ও সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য,শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কয়লাবাহী ট্রাক উল্টে গিয়ে ইট ভাটার শ্রমিকদের থাকার মেসের উপর গিয়ে পড়ে। এ সময় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ১২ শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
পিবিএ/জিজি