“জীবনের গল্প এতো ছোট নয়তো “

খালিদ হোসেন মিলু: জীবনের গল্প এতো ছোট নয়তো, যা কিছু বলার নাও বলে নাও পাবেনা সময় আর হয়তো। জীবনের গল্প অল্প নয়, জীবনের গল্প বলে শেষ হবার নয়। সময়ের সাথে জীবনের গল্প সেই দিন হয়ত শেষ হবে যে দিন তুমি আর থাকবেনা এই ধরনীর বুকে। জীবন প্রদীপ নিভিয়ে যাওয়ার আগেই হয়ত হয়ত কারও বলা হয় আর কারও জীবনের গল্প শুধু স্মৃতি হয়ে রয়ে যায় রঙিন শহরে।

সৌন্দর্যের রানী পার্বত্য চট্টগ্রামের নীলাভূমি। সারাদিন রাঙামাটি, বান্দরবানের পাহাড়ি লেক, ঝর্ণা, পাহাড়ের বুক জুড়ে উচু নিচু পাহাড়ি রাস্তায় পথ চলতে চলতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়লাম৷ প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মনটা ছন্দে আর আনন্দে ভরে গেল। দিন শেষে সন্ধ্যা নেমে এলো ফিরে এলাম একটি রিসোর্ট এ।

রাতের খাবার শেষে রিসোর্টের জানালার পাশে বসলাম।জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে ঐ পাহাড়ি জোছনার আলো আমার চোখে মুখে পড়ল। ঠিক তখন আমার মনটা সুর আর ছন্দের রাজ্য এ হারিয়ে গেল।

রাত বাজে ১২টা ১মিনিট তখন ডায়েরি আর একটা কলম নিয়ে জানালার পাশে লিখতে বসলাম, লিখতে তো কত কিছুই না ইচ্ছে করে কিন্তু সবকিছুই কি আর লিখা যায়! জীবন এমনি এক বৈচিত্রময় গল্প যেখানে কখনো ছন্দের মিল থাকে আবার কখনো থাকে না। যা লিখতে চাইলে কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে তবু জীবনের গল্পটা শেষ হবে না, সে তো ফুরিয়ে যাবারও নয়।
সময় ছুটে চলে আপন গতিতে। ঝর্ণা যেমন চলার পথে কোথাও বাঁধা পেয়ে তৈরী করে সরোবর আবার কোথাও গহীন অরণ্যে সৃষ্টি করে গভীর খাঁদ। তেমনি মানুষও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলার পথে জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে তৈরী করে কত না গৌরবময় সৃষ্টি আবার কখনো কখনো কুৎসিত কদাকার বীভৎস রূপ।
জীবনে সবকিছুই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, গান, কবিতা, স্মৃতি সবই। জীবন কখনো সুখের কখনো দুঃখের হতেই পারে তাই বলে থেমে থাকা! না! কখনোই না।

কিছু ভালবাসা, কিছু স্মৃতি আর কিছু কষ্ট যা মানুষের সবসময় মনে থাকবে। ভালবাসা এমন একটা অনুভূতি যেটা কারো সাথে সারাজীবন থেকেও আসে না। আবার কারো সাথে হয়তো কিছু মুহুর্তই যথেষ্ট যা কখনো জোর করে হয় না।
কিন্তু সবছেয়ে বড় কথা হল ‘সম্মান’ যেটা সবকিছুতেই আবশ্যক। জীবনের কিছু ঘটনা থাকে যা শেয়ার করলে অনেকেই শুনে কিন্তু নিজের মত করে বুঝতে চায় না। মানুষের জীবনে অনুশোচনা করার মত অনেক ঘটনাই থাকে যা নিজেকে তিলে তিলে পুড়িয়ে মারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর উল্টোটাও ঘটতে পারে অনুশোচনার দহনে পুড়ে খাটি সোনা হয়ে উঠতে পারে। আসলে সবটুকুই নির্ভর করে ব্যাক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উপর। আমি মনে করি একটি ব্যাক্তি ভুল করলে তার প্রতি সমাজের রূঢ় আঙুল না উঠিয়ে ভুলটা শুধরে দেয়া যদি তাও সম্ভব না হয় অন্তত ভুলটা ধরিয়ে দেয়া কিংবা তাকে অনুশচনার সুযোগ দেয়া। যে অপমান সইতে পারে সেই তো জীবনের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে বহুদূর যেতে পারে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না জীবনে কেউ কখনো হারে না, হয় তো জিতে নয় তো শিখে।

অতীত কোন ঘটনা অনুশোচনাকে কেন্দ্র করে জীবনকে থামিয়ে দেয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কেননা অতীতকে যে পরিবর্তন করা যায় না তা ধ্রুব সত্য। তাই অতীতকে অনুশোচনার মাধ্যমে বর্তমানকে শুধরে ভবিষ্যতকে আলোকময় করার চেষ্টা করা উচিৎ। জীবনে নিজের নেয়া কোন সিদ্ধান্তকেই ছোট করে দেখা ঠিক না, কেননা তোমার জীবন তোমার দুনিয়া। অন্যের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার চেয়ে নিজের সিদ্ধান্তে বার বার হোছট খাওয়াটা অনেক ভালো। নিজের পৃথিবী, নিজের ইচ্ছা, নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে চলতে হবে তবেই একজন মানুষ সফল হবে। সামনে অবারিত সম্ভাবনার হাতছানি, এইতো সময় এগিয়ে যাওয়ার সুন্দর-সুখী জীবনের পানে।

তাইতো জীবনের সয়ম গুলো ফুরিয়ে যাওয়ার আগে জীবনের গল্প গুলো বলা হয়। আবার কারও জীবনের মাটির প্রদীপ নিভিয়ে যাওয়ার আগে না বলা গল্প গুলি শুধু স্মৃতির জানালায় স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়।

লেখক ও সাংবাদিক
খালিদ হোসেন মিলু

আরও পড়ুন...