জীবন জীবিকার তাগিদে লেখাপড়ার বয়সে হাতে চায়ের ফ্লাক্স

পিবিএ,ঢাকা : যেই বয়সে হাতে বইখাতা নিয়ে স্কুলে দৌড়-ঝাপের কথা, স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আবার দস্যিপনা করার কথা, সেই বয়সে ফ্লাক্সে চা আর সিগারেট নিয়ে হকারি করছে ১৪ বছর বয়সি কিশোর মোঃ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। তবে হকারী করলেও তার ছেলে মানুষির দেখা মেলে ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগ সংলগ্ন রাস্তায়। চা, সিগারেট বিক্রির ফাঁকে ফাঁকেই লাটিম ঘুরাচ্ছে সে। বেশ পারদর্শিতার সাথেই মাটিতে ঘুর্নিয়মান অবস্থায় তা আবার হাতে তুলে নিচ্ছে।

আগ্রহ থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। “তুমিতো বেশ ভালই লাটিম ঘুরাতে পারো দেখছি” বলতেই ইব্রাহীমের মুখে উপচে পড়লো হাসি।

কথা বলে জানাযায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাপরতলা গ্রামের মোঃ সেন্টু মিয়ার ছেলে ইব্রাহীম। মায়ের নাম জলেহা বেগম। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সে। পরিবারের সাথে থাকে চানখারপুল চক হোটেলের পাশে। বাবা সেন্টুও বাসাতেই চা তৈরি করেন। বাসা থেকেই হকাররা সেই চা কিনে আনেন। তার বড় ভাই সোহাগও নাজিমউদ্দিন রোডের একটি হোটেলে কাজ করেন।

ইব্রাহীম জানায়, ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগ সংলগ্ন রাস্তায় গত ২ মাস ধরে হাতে করে চা, সিগারেট, মুড়ির মুয়া, বিস্কেট বিক্রি করে সে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বছর খানেক পান, সিগারেট বিক্রি করেতো। বঙ্গমার্কেটেও চায়ের দোকান ছিলো তাদের।

গ্রামের একটি স্কুলে ক্লাস ওয়ানে লেখাপড়া করতো ইব্রাহীম। তখন মা-বাবা তাকে ঢাকায় এনে চানখারপুলের একটি স্কুলে ভর্তি করান। তবে পড়াশুনা ভালো না লাগায় ভর্তির ৬-৭ দিন পর আর স্কুলে যায়নি সে।

এই বয়সেই পরিবারের উপার্জনক্ষম ছেলে ইব্রাহীম। প্রতিদিনই হাতে চা, সিগারেট, মুড়ির মুয়া, বিস্কেট নিয়ে সকাল ১১ টায় বের হয় সে। সারাদিন ঘুরেঘুরে বিক্রির পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আবার বাসায় ফিরে।

এই হকারী করতে কেমন লাগে তার জানতে চাইলে ইব্রাহীব বলে, “কিছুটা খারাপই লাগে। তবে যেদিন মনে চায়না সেদিন আর বিক্রি করতে বের হইনা।”

বেশি বিক্রি হলে ৩ হাজার টাকার মত, তাছাড়া নিয়মিত ২৫শ টাকার মত চা, সিগারেট বিক্রি হয় তার। আর এতে ৫শ টাকার মত লাভ থাকে। তবে ৫০-৬০ টাকা নিজের কাছে রেখে বাকি টাকা বাবার কাছে দিয়ে দেয় সে। কখনও কিছু খেতে মন চাইলে তা কিনে খাওয়ার জন্যই এই টাকাটা নিজের কাছে রাখে বলে জানায় ইব্রাহীম।

ইব্রাহীমের মতে, বন্ধু-বান্ধব ভালো লাগেনা তার। একাই থাকতে ভালো লাগে। তবে খেলা করার জন্য পকেটে সবসময় একটি লাটিম রাখে সে। যখন মনে চায় পকেট থেকে লাটিম বের করে রাস্তার পাশেই খেলতে থাকে আপন মনে। লাটিম ঘুরাতেই তার বেশী ভালো লাগে সন্ধ্যার পর বাসায় গিয়েও রাস্তায় লাটিম ঘুরায় সে। এমনই ছেলেপনায় আশেপাশের অনেকের নজর কাড়ে তার লাটিম।

পিবিএ/এইচএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...