জেনে নিন, ইসলামী পদ্ধতিতে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম

sleep-pba

পিবিএ ডেস্ক: পৃথিবীর সব মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাধুর্য চরিত্রের অধিকারী হলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মানব জাতির প্রত্যেক বিষয়ের উপযোগী শিক্ষা ও সমাধান দিয়েছেন তিনি। তিনি উত্তম আদর্শের বাতিঘর। জাতি সভ্যতার সেরা শিক্ষক। বিশুদ্ধ অন্তর গড়ার কারিগর। তাঁর শিক্ষা-সংস্কৃতিতে নিহিত আছে মানব ভব্যতার পাঠ। তাঁর প্রতিটি কর্ম অনুসরণযোগ্য। তিনি অনুসরণীয়। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে পরিবার পরিচালনা পর্যন্ত। তাঁর শুদ্ধময় জীবনের নানা বিষয় থেকে এখানে ঘুমের পরিশুদ্ধ পদ্ধতির প্রতি আলোকপাত করা হলো

ঘুমানোর আগে অজু : অজু পবিত্রতার পর্ব। অজু চেহারা ও ত্বকের পথ্য। বরকত হাসিলের মাধ্যম। ধর্মীয় ফরজ ও অন্যান্য কাজ প্রারম্ভের প্রথম খুঁটি। ঘুমানোর আগে অজু করা স্বাস্থ্যের সৌন্দর্য ও শরীর পরিষ্কারের জন্য নিয়ামক। অজুকালে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেলে শহীদি মর্যাদার অধিকারী। এক হাদিসে বিধৃত হয়েছে, ‘অজু থাকা অবস্থায় কেউ মারা গেলে, তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হবে।’ অধিকন্তু ঘুম মৃত্যুর মতো বলা যায়। সুতরাং ঘুমানোর আগে অজু করা জরুরি। ঘুমানোর আগে অজু করার শিক্ষা দিয়েছেন মুহাম্মদ (সা.)। বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘তুমি যখন শোয়ার বিছানায় যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করবে। তারপর ডান কাতে শোবে। (বোখারি ৬৩১১, মুসলিম ৬৮৮২)।

ডান কাতে শোয়া : ডান কাতে শোয়া ইসলামী বিধানে সুন্নত। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) ডান কাত হয়ে ঘুমাতেন। ডান কাতে শোয়ার দ্বারা হৃৎপি- ভালো থাকে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এ কথা স্বীকার করেছেন। হার্ট দুর্বল এমন রোগীদের ডান পাশে ফিরে ঘুমাতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অথচ ডানদিকে ফিরে শোয়ার নির্দেশ রাসুল (সা.) ১৫০০ বছর আগেই দিয়েছেন, যা আগের হাদিসের শেষাংশে বলেছেন। আর আসন্ন হাদিসে তিনি নিজে আমল করে দেখিয়ে গেছেন। বারা ইবনে আজিব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) যখন বিছানায় শয়ন করতেন তখন ডান পাশে ফিরে ঘুমাতেন।’ (বোখারি ৬৩১৫)।

ঘুমানোর আগে-পরে দোয়া : ইসলাম মানব জাতিকে প্রত্যেক কাজকর্মে আল্লাহর স্মরণ করতে বলেছে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার পাঠ দিয়েছে। নবীজি (সা.) বলে গেছেন, ঘুমানোর আগে দোয়া করে আল্লাহর হাওলায় নিজেকে সমর্পণ করে ঘুমের কোলে ঢলে যেতে, ঘুম থেকে জেগে তাঁর করুণার প্রশংসা করতে। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুল (সা.) রাতে যখন শয্যায় যেতেন গালের নাবালে হাত রাখতেন। তারপর বলতেন ‘আল্লাহুম্মা বিইছমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’ ঘুম থেকে যখন উঠতেন বলতেন ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহ ইয়ানা বাদামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর’।” (বোখারি ৬৩১৪)।

ঘুমের আগে সূরা পড়া : ঘুম হলো মৃত্যুর অপর নাম। ঘুুমালে মানুষের পুরোপুরি হুঁশ থাকে না। তার জ্ঞানশক্তি লোপ পায়। ঘুমন্ত ব্যক্তিকে বোবায় কাবু করার বা জিন জাতি আসর করার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ঘুমানোর আগে শুয়ে শুয়ে সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পড়া প্রয়োজন। তবে না পড়লে জিনে ধরবে এমনও নয়। পড়লে সওয়াব ও বরকতের ঝুলি বৃদ্ধি হবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে মুহাম্মদ (সা.) সূরা পড়তেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) প্রতি রাতে শয্যা গ্রহণের সময় তালুদ্বয় একত্রিত করে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর হাত দ্বারা শরীরের যতদূর পর্যন্ত সম্ভব হতো, ততদূর পর্যন্ত বুলিয়ে দিতেন। আপন মাথা, চেহারা এবং শরীরের সামনের দিক থেকে আরম্ভ করতেন। এইভাবে তিনি তিনবার করতেন।’ (বোখারি ৫০১৭)।

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মিসওয়াক: মানুষ ঘুমানোর পর মুখ দিয়ে নির্গত শ্বাস বন্ধ হয়ে শুধু নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস জারি থাকে। অধিক সময় জিহ্বা অস্থির থাকে। মুখে খাবার কিছু পড়ে না। যার ফলে মুখের ভেতর লালা জমে হালকা আবরণ তৈরি করে ভেতর চামড়ায়। দাঁতে জমে থাকে লালার দাগ ও ক্ষীণ চামড়ার মতো ময়লা, যা মুখে দুর্গন্ধ ও অস্থিরতা তৈরি করে। মুখ পরিষ্কারের জন্য ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা আবশ্যক। মানবতার সেনানায়ক মুহাম্মদ (সা.) মিসওয়াক করতেন। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসুল (সা.) রাতে ঘুম থেকে জাগার পর মিসওয়াক দ্বারা নিজের পবিত্র মুখ ও হাত পরিষ্কার করতেন। (আবু দাউদ ৫৫)।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...