পিবিএ ডেস্কঃ কোষ্ঠকাঠিন্যে যে না ভুগেছে সে জানেই না এ জ্বালা কি যে জ্বালা! কোষ্ঠকাঠিন্য কিন্তু ভীষণ কষ্টদায়ক পেটের সমস্যা। যেকোনো বয়সের মানুষের এ সমস্যা হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য একটি প্রচলিত সমস্যা। সারা বিশ্বে ১০ শতাংশ লোক এ সমস্যায় ভোগেন। বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এক্সপার্টদের মতে, খাদ্যাভাসের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। সাধারণত যারা কম আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করেন তাঁদের এ সমস্যাটি দেখা দেয়। আজকের দিনে বহু মানুষের কাছে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কেউ যদি নিয়মিত ২ দিন মল ত্যাগ করতে না পারে তবে ধরে নিতে হবে তার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
১. স্বাভাবিকের চেয়ে কম সংখ্যকবার মল ত্যাগ করা। মল ত্যাগে অত্যন্ত কষ্ট হওয়া।
২. মল ত্যাগ করতে অধিক সময় লাগা।
৩. মল ত্যাগ করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া।
৪. পেট ফুলে থাকা।
৫. মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব হওয়া।
আঁশজাতীয়ঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশজাতীয় বা সেলুলোজ জাতীয় খাবার খেলে পরিপাকতন্ত্র স্বাভাবিক থাকে এবং রেচনপ্রক্রিয়ায় সমস্যা হয় না। ফলমূল, শাক-সবজি, আটার রুটি, ঢেঁকি ছাঁটা চাল ইত্যাদি সেলুলোজ বা আঁশজাতীয় খাবার অতি সহজে জোগাড় করা সম্ভব। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ এসব খাবার খেলে পেটের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে আধুনিক যুগে এখন ঢেঁকিছাঁটা পা্ওয়া কষ্টকর। চালের বদলে মেশিনে ছাঁটা ধবধবে সাদা চাল গ্রহণ করা যাবে। এছাড়া কোনোটা সহজলভ্য না হলে অন্য উপকারী খাদ্যটি গ্রহণ করা উচিত। আধুনিক জাঙ্কফুড এড়িয়ে চলুন।
প্রচুর পানি পানঃ খাবারের সাথে প্রচুর পানি পান না করলে পরিপাকে ব্যাঘাত ঘটে । কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে অনেকেই সচেতন নই। কোনোরকমে পিপাসা মেটাতে পারলেই আমরা বেঁচে যাই। অনেকে আবার পানি খেয়ে বারবার প্রস্রাব করার ঝামেলা এড়াতে পানি কম খান। পানি পানের স্বল্পতাও কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্ম দিতে পারে ।
খোসাসহ আপেলঃ প্রতিদিন ঘুমোনোর ১ ঘন্টা আগে একটি খোসাসহ আপেল খাবেন এবং ঘুমোনোর আগে এক কাপ সুষম গরম দুধ পান করুন।
মধুঃ ঘুমোনোর আগে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
গরম দুধে সাদা এলাচঃ ১টি সাদা এলাচ এক কাপ গরম দুধে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে পান করুন।
লবণ মিশ্রিত গরম পানিঃ খাবারের সাথে গরম পানি লবণ মিশিয়ে পান করুন।
টক দইঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টক দই উপকারী। এর প্রোটো-বায়োটিক গুণাগুণ আপনার হজমের সমস্যাও দূর করে।
ইসবগুলের ভুষিঃ ইসবগুলের ভুষি পানির সাথে মিশিয়ে খেলে যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হয় এটা প্রায় সবাই জানেন। তবে খেতে হবে নিয়ম মতো। অনেকেই ইসবগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং পরে খান। এতে আসলে উপকার হয় না। বরং পানিতে দিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে।
আবার অনেক ইসবগুল বা ভূসি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড়সহ নিয়মিত খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এই কথাও বলে থাকে গ্রামে-গঞ্জে দীর্ঘকাল ধরে। এ কথা সত্যি ইসবগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক উপকারে দেয়।
বেলের শরবতঃ বেলের শরবত অনেক উপকারী। ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে শরবত করে নিয়মিত পানে উপকার পাবেন।
তিল বীজঃ তিল বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে অনেক উপকার করে থাকে। তিল বীজ গুঁড়ো করে আটা বা ময়দার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খেতে পারেন। এতে দেহে ফাইবারের অভাব পূরণ হবে। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়ে যাবে।
পরামর্শঃ ২ সপ্তাহের বেশী কোনো কোষ্ঠকাঠিন্য স্থায়ী হলে সংশ্লিষ্ট রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করা দরকার। এছাড়া হঠাৎ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে, মলের সাথে রক্ত বেরোতে শুরু করলে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেবার পর কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস পেতে থাকলে, কিংবা মলত্যাগের সময় পেটে প্রচন্ড ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করা উচিত ।
কোষ্ঠকাঠিন্যের যে কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে অর্থাৎ নানা রকম ওষুধ দিয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে সমস্যাটি দূর করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এই সুফল ধরে রাখার জন্য অবশ্যই তার খাদ্যাভাস এবং জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে এই সমস্যা কিন্তু বার বার ভোগাবে। তবে কোনো রোগের কারণে যদি এ ধরণের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, তবে দ্রুত সে রোগের চিকিৎসা করতে হবে। এক্ষেত্রে দেরী করা কিন্তু মোটেও ঠিক হবে না।
পিবিএ/এমআর