জেনে নিন, গল্প লেখার সহজ কলাকৌশল

গল্প লিখতে পারে এমন লোক দুনিয়ায় খুবই বিরল। লাখে একজন হবে। হয়তো আরও কম। কিন্তু অনেকেই জমিয়ে গল্প বলতে পারে। আসর মাতিয়ে তোলে তারা কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে। কিন্তু জমিয়ে গল্প বলা এক জিনিস, আর গল্প লেখা আরেক। গল্প লেখা মানে গল্প তৈরি করা। কাহিনি বানানো। সেটা একেবারে ভিন্ন ধরনের কাজ। কিন্তু কেন সবাই গল্প লিখতে পারে না? এর উত্তর খুবই সহজ। গল্প লেখার কিছু নিজস্ব কলাকৌশল আছে। আর সবাই সেটা রপ্ত করতে পারে না।
কিন্তু কী সেই কলাকৌশল, তা ব্যাখ্যা করা কঠিন। তা ছাড়া দুনিয়ার সব লেখক এ বিষয়ে একমত হয়ে গেছেন যে গল্প লেখার কলাকৌশল কেউ কাউকে শিখিয়ে দিতে পারে না। এগুলো নিজে নিজে রপ্ত করে নিতে হয়।
তবু কিছু সাধারণ নিয়ম নিশ্চয়ই আছে, যার গুণে একজনের লেখা আরেকজনের চেয়ে ভালো হয়ে ওঠে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

পাঠাকের কথা মাথায় রাখা:

লেখার সময় পাঠকের কথা মাথায় রাখতে হবে। সবার আগে ভাবতে হবে, তোমার লেখা কেউ পড়ছে। একেবারে অচেনা কেউ পড়ছে। পুরো গল্পটা তোমার মাথায় আছে বটে, কিন্তু ওই অপরিচিত পাঠক এর কিছুই জানে না। সে শুধু সেটুকুই জানছে, যেটুকু তুমি লিখছ। তুমি নিজের লেখা একজন অপরিচিত পাঠকের চোখ দিয়ে পড়তে থাকো। অনেকটা দাবা খেলার মতো—তুমি একটা চাল দিচ্ছো, দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় তোমার এই চাল নিয়ে কী ভাবছে, পুরো খেলাটা সে কীভাবে দেখছে সেটাও তোমাকে ভাবতে হচ্ছে। অধিকাংশ লোক ভালো লিখতে পারে না, মনে মনে পাঠকের চোখ দিয়ে নিজের লেখাটা পড়তে পারে না বলে।

কাহিনির নিয়ম মাথায় রেখে গল্প লেখা:

তুমি একটা গল্প লেখার জন্য একটা কাহিনি বা প্লট ঠিক করেছ। লিখতে শুরুও করে দিয়েছ। কিন্তু কখনো আশা কোরো না, তোমার চরিত্রগুলো তোমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তুমি যেভাবে শুরুতে ভেবেছ, লিখতে লিখতে কাহিনি আর সেদিকে না-ও যেতে পারে। বদলে যেতে পারে। যদি বদলে যায়, বুঝবে গল্পটা ভালো হয়েছে।

একসঙ্গে পুরোটা না বলা:

তোমার মাথায় একটা প্লট আছে। কিন্তু সেটা পুরোটা একবারে বোলো না। একটু একটু করে বোলো। কিছু বিষয় পরে বলার জন্য রেখে দাও। আবার কিছু জিনিস বলারই দরকার নেই। কাহিনির জন্য সেগুলো অদরকারি। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার নামটা কি গল্পে বলা হয়েছে? হয়নি। তাতে গল্প বুঝতে কোনো সমস্যা তো হয়নি।

চারপাশের কথা মাথায় রেখে কল্পনা করা:

কাহিনি তোমার চারপাশের চেনা জগৎ থেকে নিতে পারো, আবার তোমার জগতের একেবারে বাইরে থেকে, ফ্যান্টাসির জগৎ থেকেও নিতে পারো। তবে চেনা জগৎ থেকে কাহিনি নিলে চেষ্টা কোরো চেনা জায়গা আর লোকগুলোকে যতটা পারা যায় অচেনা করে তুলতে। চরিত্রগুলোকে বদলে দাও। ধরো তোমার ক্লাস টিচারকে নিয়ে যদি গল্প লিখবে বলে ঠিক করে থাকো এবং তিনি যদি একজন মিস হন, তাহলে তাকে বদলে দিয়ে স্যার বানিয়ে দাও। যদি তোমার স্কুলটা ছেলেদের স্কুল হয়, তাহলে মেয়েদের স্কুল বানিয়ে দাও।

বইয়ের পোকা হওয়া:

যাঁরা ভালো গল্প লেখেন, মানে তোমার প্রিয় লেখক যাঁরা, তাঁদের লেখাগুলো একাধিকবার পড়ো। প্রথমবার পড়ো গল্প পড়ার মজা নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়বার পড়ো কীভাবে গল্পটা লেখা হয়েছে সেটা লক্ষ করার জন্য। বোঝার চেষ্টা কোরো, তারা কীভাবে গল্পটা সাজিয়েছেন। কীভাবে শুরু করেছেন। কীভাবে শেষ করেছেন। পছন্দের গল্পটা তুমি তৃতীয়বার পড়তে পারো, শুধু প্রথমবার পড়ে কেন ভালো লেগেছিল, সেইটা বোঝার জন্য।

এভাবে নিজের মত করে চেনা জিনিসগুলোকে অচেনা করে দিতে পারলে তোমার কল্পনা করার জায়গা বেড়ে যাবে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভালো লেখক হতে গেলে সবার আগে ভালো পাঠক হতে হয়। ভালো-মন্দ, দরকারি-অদরকারি সব ধরনের লেখা পড়তে হয়। লেখকদের বইয়ের পোকা না হয়ে কোনো উপায় নেই।

আরও পড়ুন...