পিবিএ ডেস্কঃ সকাল থেকে বেশ ভালোই তো ছিলেন। কিন্তু এখন আবার শরীরটা এমন ম্যাচম্যাচ করছে কেন! সঙ্গে হাল্কা গা গরম ভাব আর চোখ জ্বালাও তো করছে। তাহলে কি জ্বর এল? এই পরিস্থিতির সম্মুখীন কিন্তু আমরা মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকি। আর যখন আমাদের অনেক কাজের চাপ থাকে সেই সময়ে এরকম হলে তো খুবই সমস্যা।
তখন আমরা ভাবতে থাকি যে কী করব। কিন্তু কথায় কথায় ওষুধ খেয়ে নেওয়াও তো খুব ভালো কাজ নয়। আর জ্বরও নানা কারণে আসতে পারে। কেন হঠাত জ্বর আসে আর তখন আপনাদের ঠিক কী কী করা উচিৎ ওই সময়ে ভালো থাকার জন্য।
জ্বর কেন হয়ঃ প্রথমেই এটা মাথায় রাখুন যে জ্বর কিন্তু কোনও রোগ নয়, রোগের অন্যতম উপসর্গ। আমাদের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা থাকে ৯৮ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মতো।
কিন্তু এর থেকে যখন সামান্য তাপমাত্রা বাড়ে, মানে ১০০ অতিক্রম করে তখন তা সামান্য জ্বরের ইঙ্গিত নিয়ে আসে। অবশ্য সেটা নিয়ে খুব চিন্তার কিছু থাকে না।
অতিরিক্ত মাত্রা জ্বরঃ আর জ্বর যখন ১০৩ এর কাছাকাছি যায় তখন তা মাঝারি জ্বর হিসেবে ধরা হয়। তার উপরে গেলে তা উচ্চ জ্বর আর তখন কিন্তু সত্যিই খুব সাবধান হওয়া দরকার হয়ে পড়ে।
জ্বর অনেক সময়ে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটা মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
যদি কোনও ব্যাকটেরিয়াল আক্রমণ হয়, তখন শরীর হয়ত তাপমাত্রা বাড়িয়ে তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। শরীর তখন রক্তে অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান তৈরি করতে থাকে।
অন্যান্য কারণঃ এছাড়া অন্য রোগ, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের সময়েও জ্বর হয়।
আবার দীর্ঘ দিন ধরে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক নিতে থাকলে তার থেকেও জ্বর আসতে পারে।
কোনও বেআইনি ড্রাগের সংসর্গে অনেক দিন থাকলেও কিন্তু মাঝে মাঝে জ্বর আসে।
অনেক রকমের ওষুধঃ এর পাশাপাশি সদ্য কোনও অপারেশন থেকে উঠলে বা হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যার পরেও জ্বর হয়।
কোনও সময়ে গভীর মানসিক আঘাত পেলে তার থেকেও মাঝে মাঝে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
হঠাত জ্বর হলে কী করণীয়ঃ জ্বর কেন হয় সেটা তো আলোচনা করলাম। এবার দেখা যাক জ্বর হলে ঠিক কী কী করণীয়। কারণ সব সময়ে কথায় কথায় ওষুধ খাওয়া, তাও নিজের সিদ্ধান্তে একদমই ঠিক নয়।
খাবার কি খাবেনঃ জ্বরের সময়ে প্রধান চিকিৎসা হল তরল জিনিস খাওয়া। যদি অফিসে থাকেন তাহলে জ্বর আসছে বুঝলেই অনেকটা পানি খান, গ্যাপ দিয়ে দিয়ে।
আর চেষ্টা করুন একটু গরম স্যুপ খেয়ে নেওয়ার। বাড়িতে থাকলেও এই একই কাজ করুন। সঙ্গে আদা-চা খান। এতে গলা ব্যথা বা মাথা ধরা থাকলে তা অনেকটা কমবে।
গোসল করবেন কি ভাবেঃ জ্বর আসলেই রোগীর সারা শরীর স্পঞ্জিং করতে হবে অর্থাৎ ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
তবে ঠাণ্ডার ধাত থাকলে বা বুকে কফ বসে যেতে পারার সম্ভাবনা থাকলে কিন্তু খুব সাবধানে স্পঞ্জিং করতে হবে। আর এই সময়ে হাল্কা করে পাখা চালাতে পারেন।
ওষুধ খাবেন কিনাঃ অফিসে বা কোনও কাজে বাইরে থাকলে আপনি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন। তবে ওই একবারই। এর পরে আর নয়। আর খাওয়ার আগে জেনে নিন এতে কোনও সাইড এফেক্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা আপনার।
আর কি কি করনীয়ঃ জ্বরের সময়ে যদি আপনি একটু পানি গরম করে তার মধ্যে লেবুর রস নিয়ে আর তাতে খানিক আদা কুচি দেন আর এই পানি খান, তাহলে কিন্তু আপনার অনেকটা উপকার হবে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা দূর হবে আর জ্বরও কমতে পারে।
আরেকটি কাজ করতে পারেন। সামান্য জিরে আর কয়েকটা তুলসী পাতা জলে ফুটিয়ে নিন। তারপর রেখে দিন। জ্বরের সময়ে রোজ সেখান থেকে দু চামচ করে খান। দেখবেন বেশ উপকার পাবেন গলায়।
জ্বর হলে আমাদের একটা প্রবণতা থাকে সব সময়ে শুয়ে থাকার। এটি করবেন না। এতে জ্বর বরং বেড়ে যায়। না না, তার মানে আপনাকে দৌড়তে বলা হচ্ছে না। কিন্তু একটু রোদের মধ্যে গিয়ে খানিক বসুন।
দেখবেন তাতে খুব একটা খারাপ লাগবে না। গরম কালে আবার রোদে বসা সম্ভব নয়। তখন এমনিই একটু ছায়া জায়গা দেখে বসুন। এতে গা ম্যাচম্যাচ করা ভাবটা খানিক কমবে।
অফিসে থাকার সময়ে জ্বর এলে তো কিছু করার থাকে না। তখন চেষ্টা করুন মাঝে মাঝে একটু গরম চা খাওয়ার। আর বারে বারে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেওয়ার। এটা কিন্তু তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে খুবই সাহায্য করবে। আর খানিক চোখ বন্ধ করে আপনার ডেস্কে মাথা রেখে শুয়ে নিন।
যদি আপনার জ্বর আসে তাহলে এই কাজগুলো কিন্তু আপনি অনায়াসেই করতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই সময় করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যদি জ্বর বেশি হয় বা অনেক দিন জ্বর থাকে।
পিবিএ/এমআর