জয়পুরহাটে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, ঠাঁই নেই হাসপাতালের বেডে

পিবিএ,জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে প্রচন্ড তাপদাহ আর ভ্যাবসা গরমের কারনে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ। আধুনিক জেলা সদরের আধুনিক হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গড়ে তিনগুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন প্রতিদিন। এমন বিপুল সংখ্যক ডায়রিয়াই আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের।

ডায়রিয়ার জন্য শুধু জেলা আধুনিক হাসপাতালে আলাদা ২৫ টি বেড থাকলেও গড়ে প্রতিদিন সেখানে ভর্তি হচ্ছেন ২৫ থেকে ৩০ জন আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক রোগীরা, এছাড়াও চিকিৎসা নিতে ৪ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও কনসালটেশন সেন্টারেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা নিতে ছুটে আসছেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্ক রোগী রয়েছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না থাকায় মেঝেতে জায়গা দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাটে প্রচন্ড তাপদাহ আর ভ্যাবসা গরমের কারনে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ।
ঠাঁই নেই হাসপাতালের বেডে

সরেজমিন রবিবার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈরি আবহাওয়া ও প্রখর রোদ, ধুলোবালির পাশাপাশি অপরিষ্কার,অপরিচ্ছন্নতা,ভ্যাপসা গরমের কারণে রোটা নামক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। গত এক সপ্তাহ থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় দুই শত পনের জন রোগী এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জয়পুরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যায় বেশী। মার্চ-এপ্রিল মাসে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। এই রোগে আক্রান্তদের প্রথমে জ¦র আসে তারপর তাদের একাধিকবার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়, তবে ভয়ের কোন কারণ নেই হাসপাতালে ভর্তির পর রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা ৭-৮ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর তারা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন।

হাসপাতালে ভর্তি জয়পুরহাট সদর উপজেলার রাঘবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী রুহিনা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে আসার পর জ¦র শুরু হয়, তারপর স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা চিকিৎসা দেয়, কিন্ত দুইদিনেও বমি ও পাতলা পায়খানা ভালো না হওয়ায় আবারো চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালগঞ্জ গ্রামের ৬ বছরের ছেলে আলী হোসেন এর মাতা বিউটি বেগম জানান, শনিবার সকালে জ¦র হয়, রাত থেকে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে বন্ধ না হলে হাসপাতালে ভর্তি করি। দিনাজপুর জেলার হিলির দক্ষিণ বাসুদেপুর গ্রামের ৬ মাসের শিশু সোয়াইব হোসেন এর মা শাকিলা আক্তার, বুধবার বিকেল থেকেই জ্বর,বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছিল, এখন জ¦র,বমি না থাকলেও পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়নি, যে পানি পান করছে তাই বের হয়ে যাচ্ছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভিটি এলাকার শিল্পী বেগম জানান, আমার পাতলা পায়খানা ও বমি বন্ধ হয়েছে তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি,এখন ভালো আছি। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডাঃ মোঃ আবুল হোসেন জানান, রোটা ভাইরাল সংক্রান্ত ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতা, প্রচন্ড তাপদাহ আর ভ্যবসা গরমের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মানুষের খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

বছরের এ সময়টা আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে রোটা ভাইরাসের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যা অস্বাস্থ্যকর খাবার ও দুষিত পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে। জয়পুরহাট জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ রাশেদ মোবারক বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ বর্তমানে কিছুটা বেড়েছে। গোটা জেলাসহ আশ-পাশের বিভিন্ন জেলার আক্রান্ত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে এর সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে।

তবে হাসপাতাল থেকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে,তাছাড়া খাওয়ার আগে ও পায়খানা থেকে আসার পর ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে হবে, টিউবয়লের পানি পান করতে হবে এবং পাতলা পায়খানার লক্ষণ দেখা দিলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক যেতে বলা হয়েছে এবং অবস্থা গুরুতর হলে জেলা হাসপাতালে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এ অবস্থা কেটে যাবে। জেলার হাসপাতাল গুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেডের সংখ্যা আরো বৃদ্ধির মাধ্যমে সেবার মান বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, এমনটা মনে করছেন জয়পুরহাট বাসী।

পিবিএ/এ/আরআই

আরও পড়ুন...