ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, আতঙ্কে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা

পিবিএ, লক্ষ্মীপুর: ছাদের কোন অংশে পোলেস্তার নেই, দেখা যাচ্ছে ভিম আর পিলারের ভিতরের মরিচা ধরা লোহার রড। আবার রয়েছে বড় বড় ফাটল, সামান্য বৃষ্টিতেই ভবনের ছাদ থেকে চুইয়ে পড়ছে পানি। এর মধ্যেও প্রতিনিয়ত চলছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলার ৯৯ টি বিদ্যালয়ের এমন জরাজীর্ণ অবস্থা, রয়েছে শ্রেণীকক্ষ সংকট। চরম আতঙ্কে আছেন এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এতে একদিকে বিদ্যালয়ে আসার আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, অন্যদিকে জরাজীর্ণ ভবন ধসে প্রাণ হানির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানালেও কোন সুফল মিলছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 ছাদের কোন অংশে পোলেস্তার নেই, দেখা যাচ্ছে ভিম আর পিলারের ভিতরের মরিচা ধরা লোহার রড।
জরাজীর্ণ লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার রামগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতিসহ ৫টি উপজেলায় ৭৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে জরাজীর্ণের তালিকায় রয়েছে ৯৯টি বিদ্যালয়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলছে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান।

জরাজীর্ণ লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের নাগ রাজারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার ভূইয়া জানান, জরাজীর্ণ হওয়ায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ছয় বছর পার হলেও নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি। শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে পাশের মাদ্রাসার কয়েকটি রুমে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বেশ কয়েক দিন খোলা আকাশের নিচেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়েছে।

জরাজীর্ণ লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

পাঠদানের অনুপযোগী হওয়ায় সদর উপজেলার তালহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণীর কক্ষ দুইটিতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ফলে অন্য একটি কক্ষে পালাক্রমে এ দুই শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোছাম্মদ হাছিনা আক্তার বলেন, জরাজীর্ণ শ্রেণীকক্ষে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকরা পাঠদান করছেন। যেকোন মুহুর্তে ভবন ধসে দূর্ঘটনার আসঙ্কা করছেন তিনি। পাঠদানে সুবিদার্থে একটি নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করেন এই শিক্ষক।

জরাজীর্ণ লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

শিক্ষক ও শিশু শিক্ষার্থীরা জানান, ভাঙাচুরা বিদ্যালয় সারাক্ষণই ভয় নিয়ে ক্লাস করতে হয়। এ জন্য আতংকে পাঠদানে মনোযোগী হওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ এসব ভবনে পাঠদান করতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্তকর্তাদের অবহিত করেও কোন পরিবর্তন আসছে না। তাই তারা অনতিবিলম্বে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। অন্যথায় ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের দূর্ঘটনা।

জরাজীর্ণ লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

লক্ষ্মীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সালেহ জানান, জেলায় জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা ইতো মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার কাজও চলছে। এক বছর না হোক আগামী অর্থ বছরের প্রকল্পের মাধ্যমে সবগুলো জরাজীর্ণ বিদ্যালেয়র কাজ সম্পন্ন করা হবে। আশা করি পিইডিপি-৪ কর্মসূচীর আওতায় জেলায় কোন জরাজীর্ণ বিদ্যালয় থাকবে না বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বিদ্যালয়গুলোর দূর্ঘটনা এড়াতে ও মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোতে সরকার নতুন ভবণ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

পিবিএ/এফএইচ/আরআই

আরও পড়ুন...