পিবিএ, টঙ্গী : মার্কেট মালিককে বকেয়া ভাড়ার টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্ট্যাম্প উদ্ধার করে ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানায় অভিযোগ করেছেন মার্কেট মালিকপক্ষ।
এঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বিচার সালিশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
টঙ্গী আউচপাড়া কলেজ রোডের মুল্লুক চাঁন মার্কেটের মালিক মুল্লুক হোসেন জানান, তাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে নিজস্ব মার্কেটের কিছু অংশ তার ভাতিজা সুলতান উদ্দিন রাসেলকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। সাইফুল ইসলাম ওরফে বিপুল নামের একজন ব্যবসায়ী রাসেলের কাছ থেকে ৫ বছর মেয়াদে মার্কেটের একটি দোকান ভাড়া নেন। যার মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় সাড়ে ৬লাখ টাকার বকেয়া ভাড়া নিয়ে তাদের মধ্যে দেন দরবার চলছিল। বকেয়া ভাড়ার টাকা না দিয়ে বরং ভাড়াটিয়া বিপুল সম্প্রতি দলবল নিয়ে মার্কেট মালিক মুল্লুক হোসেনের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় মুল্লুক হোসেন আহত হলে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এতে থানায় অভিযোগ দিলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আপোষ ফয়সালার উদ্যোগ নেয়া হয়। এনিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বিচার সালিশের জন্য একাধিকবার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হলেও ভাড়াটিয়া বিপুল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অহেতুক কালক্ষেপণ করছিল। ইতিমধ্যে গত ২৫ জুন রাত ৯টায় বকেয়া ভাড়ার টাকার জন্য ভাড়াটিয়া বিপুল মার্কেট মালিক মুল্লুক হোসেনের ভাতিজা রাসেলকে খবর দিয়ে তার মোক্তার বাড়ি রোডের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে রাসেলকে একা পেয়ে ভাড়াটিয়া বিপুল ঘরের
দরজা আটকে দলবল নিয়ে তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দেয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার আগেই বিপুল প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রাসেলের মা (মুল্লুক হোসেনের ভাবী) ও দুইজন প্রতিবেশী আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে সাক্ষী হিসেবে ওই স্ট্যাম্পে তাদের স্বাক্ষর নেয়। এদিকে এ ঘটনায় রাসেল থানায় অভিযোগ দিয়ে স্ট্যাম্পটি উদ্ধারের আবেদন জানায়। এতে সাবেক এই ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে বকেয়া ভাড়া বাবদ প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা আদায় ও তাকে দোকান ঘর থেকে উচ্ছেদেরও আবেদন জানানো হয়।
মুল্লুক হোসেন অভিযোগ করে আরো জানান, বিপুল একজন প্রতারক। সে ব্যবসার নামে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোটা অংকের ঋণ এনে আত্মসাত করে থাকে এবং নিয়মিত দোকান ঘরের ভাড়া পরিশোধ করে না। এমনকি একপর্যায়ে মোটা অংকের ভাড়া বকেয়া ফেলে বিভিন্ন ঝামেলা সৃষ্টির মাধ্যমে সে কেটে পড়ার চেষ্টা করে।
তার কাছে দোকানঘর ভাড়া দিয়ে বিগত ৫ বছরে তিনি এধরণের আরো বহু অভিযোগ পেয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন পাওনাদারেরা বিপুলকে দোকানে খোঁজতে আসে। পাওনাদারদের ভয়ে বিপুল পালিয়ে বেড়ায় এবং নিকটাত্মীয় ও কর্মচারীদের দিয়ে দূর থেকে সে দোকান পরিচালনা করে।
এদিকে এব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মার্কেট মালিক মুল্লুক হোসেনের ভাতিজা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা অভিযোগটি আপাতত সাধারণ ডায়েরীভুক্ত করেছি। তবে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এব্যাপারে আজ সন্ধ্যায় বিচার সালিশের কথা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে আপোষ ফয়সালা হওয়াই ভাল। যদি না হয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। জোরপূর্বক মার্কেট মালিকের ভাতিজার স্বাক্ষর নেয়ার পর যে দুই জন প্রতিবেশীর বাসায় গিয়ে স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে, তারা ভুল স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে একটি ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। তারা নিজেরাও ওই স্ট্যাম্পটি না পড়েই সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর দিয়েছেন। এধরণের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দেয়ার আগে মার্কেট মালিকপক্ষকে জিজ্ঞেস না করাটা তাদের ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করেন।
এব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসার কথা রয়েছে। যারা আলোচিত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর দিয়েছেন তারা মোবাইল ফোনে আমাকে জানিয়েছেন, তারা চুক্তিপত্র সম্পাদনের সময় উপস্থিত ছিলেন না। তাদের বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর আনা হয়েছে। তারা সরল বিশ্বাসে স্বাক্ষর দিয়েছেন। চুক্তিপত্রের তঞ্জকতার দায়-দায়িত্ব ভাড়াটিয়াকে বহন করতে হবে।
এদিকে এব্যাপারে ভাড়াটিয়া সাইফুল ইসলাম বিপুলের সাথে যোগাযোগগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দোকান কর্মচারীরা জানান, তিনি দোকানে বসেন না। কখন আসবেন তাও তারা জানেন না। তার মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায়
বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
পিবিএ/মো. জাকির হোসেন/এমএ