রাহাদ হাসান মুন্না,তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ): ভাটির জনপদ হাওর বেষ্টিত এলাকা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার অন্যতম সুন্দর ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওর। মাদার ফিসারিজ অব দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবেও ঘোষিত বিশাল এই হাওরটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যর লীলা ভুমি টাঙ্গুয়া হাওর নীল স্বচ্ছ জলের স¦র্গরাজ্যও বলা হয়। বর্ষা ও শীত এ দুই মৌসুমে দুই রকমের সৌন্দর্যে অপরূপ হয়ে ওঠে এই হাওর। পর্যটকদের মতে, এই হাওর তার আসল সৌন্দর্য্য সাজে বর্ষাকালেই।’
‘গত (১৬ জুন) থেকে এ হাওরটিতে পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। এবার এই নিষেধাঙ্গা তুলে ৩ আগস্ট থেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। নিষেধাঙ্গা তুলে নেয়ার সাথে সাথে বেড়ে উঠেছে পর্যটকদের আনাগোনা।’
হাওর ভ্রমনে পর্যটকদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের রয়েছে কিছু নিয়মনীতি এসব তোয়াক্কা না করেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকগণ চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, পয়:নিষ্কাসন, প্লাস্টিকের বজ্য সহ অপচনশীল দ্রব্য ফেলছেন হাওরে যা শুল্ক মৌসুমে বোরফসল চাষাবাদের সময় প্রভাব পড়বে এমনকি হাওরে মাছ উৎপাদন হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় হাওরবাসীরা। তারা আরো মন্তব্য করে বলেন- হাওরে প্রতিদিন কয়েকশত ছোট বড় নৌকা আসা যাওয়া করছে প্রতিদিন ভোর সকাল হতেই উচ্চ আওয়াজস্থ ‘সাউন্ডবক্স’ বাজিয়ে ঘোরাফেরা করে থাকেন যার ফলে শব্দ দূষণ সৃষ্টি হচ্চে এর প্রভাব সাধারণ মানুষজন সহ হাওর পাড়ের প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে পড়ছে।’
টাঙ্গুয়ার হাওর ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে প্রায় অর্ধশত ঝরনা এসে সরাসরি মিশেছে হাওরের পানিতে। কয়েক হাজার সারি সারি হিজল-করচ শোভিত,পাখির কলকাকলিতে মুখর এক অপরূপ সৌন্দর্য্য ধাণর করে আছে হাওরটি।যা সরাসরি এসে না দেখলে বুঝে উঠা সম্ভব নয়।মাছ,পাখি এবং শতাধিক প্রজাতির জলজ প্রণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম।জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠাপানির এ হাওরের আয়তন প্রায় ৩০ হাজার একর।’
টাঙ্গুয়া হাওওে প্রবেশ মুখেই দেখা যায় সারি সারি হিজল গাছ মনোমুগ্ধকর সবুজের হাতছানি।হাওরে পানির নিচের দিকে তাকালে দেখা মিলবে হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ও লতাগুল্মের।হাওরের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে সু-উচ্চ ওয়াচ টাওয়ার।ওয়াচ টাওয়ারের নিচেই সারি সারি হিজল করচের গাছ দাঁড়িয়ে থাকে সারা বছর।ওয়াচ টাওয়ারে উঠে বিভিন্ন ভাবে সেল্ফি তুলেন পর্যটকগন।’
টাঙ্গুয়া হাওর দেখতে দেশের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমন পিপাসুরা। প্রতিদিন ২০/৩০ ইঞ্জিন চালিত নৌকা ছুটে বেড়ায় পর্যটকদের নিয়ে।টাঙ্গুয়া হাওরের বিতর রয়েছে ছোট ছোট নৌকা।এসব নৌকা দিয়ে হাওরের বিতরের পুরো সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।তুলা যায় বিভিন্ন রকমের ছবি।
রাজধানী ঢাকা থেকে আসা পর্যটক লিমন আহমেদ জানান, টাঙ্গুয়া হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য্যর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেই দেখেছি। তবে সরে জমিনে এসে এক অন্যরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভরপুর বিশাল হাওরটি দেখলাম।জীবনে নতুন একটি পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য্য উপভোগ করলাম আমি। তবে অবসর অথবা ছুটির দিনে এ বিশাল জলরাশী বিস্তৃর্ণ হাওরটিতে আসতে পারেন। ‘তিনি আরো বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখানে আসা পর্যটকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে বলতে চাই হাওরে যেন তারা (চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, পয়:নিষ্কাসন, প্লাস্টিকের বজ্য সহ অপচনশীল দ্রব্য) না ফেলেন এভাবেই হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবে এবং হাওরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, টাঙ্গুয়া হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য পর্যটকদের কিছু বিধিনিষেদ দেয়া হয়েছে। আমি আশা করি সম্মানিত পর্যটকগন আমাদের হাওরের সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তারা নিজ নিজ উদ্বোগে এসব বিধিনিষেধ পালন করবেন। তিনি আরও বলেন, পর্যটকগণ যদি এসব বিধিনিষেধ না মানেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।