ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক যে কারণে ব্যর্থ

বৈঠক
ভিয়েতনামে ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠক

পিবিএ ডেস্ক: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার দু’দিনব্যাপী আলোচনা কোনো ফলাফল ছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক শেষে ট্রাম্প এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে এবং এই মুহূর্তে আবার দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, উত্তর কোরিয়ার অগুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে মোতায়েন পরমাণু অস্ত্রগুলো ধ্বংস করার কাজ শুরু করার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেয়ার যে প্রস্তাব পিয়ংইয়ং দিয়েছিল তা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে অনুষ্ঠিত এ শীর্ষ বৈঠক এমন সময় ব্যর্থ হলো যখন এর আগে মার্কিন সূত্রগুলো বলেছিল, এ বৈঠকে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হতে পারে এবং পরবর্তী শীর্ষ বৈঠকের তারিখও নির্ধারিত হবে। কিন্তু বাস্তবে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় বোঝা গেল, আমেরিকা ও উত্তর কোরিয়া যত বেশি বিষয়বস্তুর গভীরে ঢুকতে চেয়েছে তাদের মধ্যে মতবিরোধ তত বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে দু’দেশ সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ওয়াশিংটন চায়, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে দেশটির প্রধান পরমাণু কেন্দ্র- ইয়ং বিয়নকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। আর এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে পর্যায়ক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

কিন্তু পিয়ংইয়ং বলছে, আগে দেশটির ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে এবং তারপর পর্যায়ক্রমে পরমাণু অস্ত্র নির্মূলের কাজ শুরু করবে উত্তর কোরিয়া। এ ছাড়া, ট্রাম্পের আজকের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, উত্তর কোরিয়া তার অগুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলো আগে ধ্বংস করতে চায়; আসলটি নয়। অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলেও উত্তর কোরিয়া শুরুতেই তার ট্রাম্প কার্ডটি হাতছাড়া করতে নারাজ। পর্যবেক্ষকরা পিয়ংইয়ং-এর এই অবস্থানকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন।

এ সম্পর্কে আমেরিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রায়ান বেকার রুশ নিউজ চ্যানেল রাশা টুডে’কে বলেছেন, “বিশ্বের কোনো দেশই যখন তার চেয়ে শক্তিধর কারো সঙ্গে উত্তেজনাকর সম্পর্কের মধ্যে থাকে তখন নিজেকে নিরস্ত্র করতে চায় না। কাজেই এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার প্রধান চাওয়া হচ্ছে, নিরস্ত্রীকরণের আগে দু’দেশের মধ্যে শান্তি বিষয়ক সমঝোতা হতে হবে।”

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিগত মাসগুলোতে আমেরিকার বেআইনি ও একতরফা আচরণ উত্তর কোরিয়ার নীতি-অবস্থানের ওপর প্রভাব ফেলেছে। বিষয়টি খোদ মার্কিনীরাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী টোলেসি গ্যাবার্ড এ সম্পর্কে বলেছেন: “আমেরিকা ইরানের পরমাণু সমঝোতার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এখন উত্তর কোরিয়াকে তার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করতে রাজি করানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় সফল হতে হলে আমেরিকাকে আগে সাম্রাজ্যবাদী নীতি পরিহার করতে হবে এবং এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে, ওয়াশিংটন যা বলে বিশ্বের অন্য সব দেশ প্রজার মতো তা মেনে নেয়। দ্বিতীয়ত, মার্কিন সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে করা চুক্তি ও সমঝোতাগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।-পার্সটুডে

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...