
রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় মতিঝিল এলাকার যুবলীগ নেতাসহ চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান রমান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- বেল্লাল চাকলাদার (৪৫), মো. মঞ্জু (৪০), সাইফুল ইসলাম (৪০), মো. রাসেল (২৮), মো. জাহিদ (২৪), মো. জাকির প্রকাশ ওরফে তৌহিদ (৪০), মো. ইসমাইল হোসেন (৩৩), মো. হিরা শেখ (৩৫), মো. রফিক (৩৫), মো. বাধন (৩০), চাঁন মিয়া (৫৪) ও মো. আসলাম খাঁন (৪৫)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপ, মোবাইল ফোন, ডাকাতি করে নেওয়া ট্রাক ও ১০টি তেল ভর্তি ড্রামসহ ৪৬টি ড্রাম উদ্ধার কার হয়।
মাসুদ আলম বলেন, গত জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ আব্দুল কাদের নামের একজন পরিবহন ব্যবসায়ী ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ করেন, তার মালিকানাধীন একটি ট্রাকের চালক মো. নয়ন ও হেলপার মো. জামিরুল ইসলাম গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ৬০টি পাম অয়েলের ড্রামের চালান নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে যাত্রা করে। ৩ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে ধানমন্ডির মিরপুর রোডের হোটেল আড্ডা’র সামনে ৭ থেকে ৮ জনের একটি ডাকাত দল দুটি মাইক্রোবাস করে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে নেমে দুইজন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়। এই সময়ে পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রাকের চালক ও হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে জোর পূর্বক চেতনা নাশক ঔষধ সেবন করিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়।
ঘটনার ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে একই কায়দায় ডাকাত দল মোহাম্মদপুর থানাধীন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ গেইটের সামনে থেকে ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল বোঝাই আরেকটি একটি ট্রাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ধানমন্ডি থেকে ট্রাক ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ। মামলার তদন্তে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, রাসেল ও জাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ডাকাতির মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ ওরফে তৌহিদ কে ঢাকার কেরানীগঞ্জ আরশি নগর থেকে মো. ইসমাইল হোসেন, মো. হিরা শেখ, মো. রফিককে ঘাটারচর থেকে বাধনকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ পানগাঁও থেকে চাঁন মিয়াকে, মহাখালী থেকে বেল্লাল চাকলাদারকে ঢাকার শনির আখড়া থেকে আসলাম খাঁনকে এবং মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসলাম খাঁনের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে মুন্সিগঞ্জের বিসিক এলাকার গোডাউন থেকে ১০টি তেল ভর্তি ড্রাম, ৩৬টি খালি তেলের ড্রাম উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গ্রেফতারকৃতদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা নোহা গাড়ি, একাধিক বাটন ফোন ও একটি লুণ্ঠিত ট্রাক উদ্ধার করা হয়।
ডিসি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। ডাকাতদলের মূল হোতা মো. জাকির প্রকাশ তৌহিদ এর বিরুদ্ধে ১০টি, মো. জাহিদের বিরুদ্ধে আটটি, মো. হিরা শেখ ও রফিক এর বিরুদ্ধে ছয়টি করে, মো. মঞ্জুরের বিরুদ্ধে পাঁচটি, মো. চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি ও মো. বেল্লাল চাকলাদারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত বেলাল চাকলাদার মতিঝিল ৯নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সক্রিয় নেতা। তার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জায়গায় হলেও ডাকাতির পূর্বে নিদিষ্ট জায়গায় একত্রিত হয়। ডাকাতির সময় তারা সাধারণত বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ডাকাতি শেষে মোবাইল ফোন সিমসহ ফেলে দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায়।
উক্ত ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারসহ আরও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকার কথাও জানান তিনি।