রাসেল মোল্লা। পেশায় একজন গাড়িচালক। সে তার এই পেশার আড়ালে ডাকাত দলের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন। সে ডাকাত সরদার সবুজের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদেরকে নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরণ করে ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়।
মিন্টু রাসেলের দেওয়া তথ্যে, ভিকটিমের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিতেন।
ভুয়া ডিবি পরিচয় দেয়া একটি চক্র যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও পথচারীদের ডিবি পরিচয় দিয়ে তাদেরকে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে রাজধানীর ধলপুর এলাকায় অবস্থান করছে।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল যাত্রাবাড়ীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া ডিবি পরিচয় দেওয়া ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
গ্রেফতাররা হলেন, সবুজ খান, মিন্টু পাটোয়ারী, রাসেল মোল্লা, ইকবাল মিয়া, মনিরুল ইসলাম ও খোকন মিয়া।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৩টি ভুয়া ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ২টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি হাতকড়া, ১টি খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ড ফ্লাশ লাইট, ১টি পুলিশ মনোগ্রাম সম্বলিত স্টিকার, ৭টি মোবাইল ফোন ও ১০ হাজার ৯৫০ টাকা জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন,গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, মতিঝিল ও বাইতুল মোকারমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিল।
গ্রেফতাররা মূলত ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ও টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করত। এই কাজের জন্য গ্রেফতার রাসেল ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ভিকটিম নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরণ করত এবং ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। মিন্টু পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ও তার অন্যান্য সহযোগীরা ডিবি পুলিশের জ্যাকেট সদৃশ্য পোষাক পরা অবস্থায়, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ডকাপ নিয়ে ভাড়া করা মাইক্রোবাসে ভিকটিমকে নিজেদের ডিবি পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিত।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ভিকটিম কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামিসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারধর করত এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যেত। পরবর্তীতে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সকল জিনিসপত্র নিয়ে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত।
গ্রেফতার সবুজ খান ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূল। সে ডাকাতি কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি (ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল ইত্যাদি) সরবারহকারী হিসেবে কাজ করত। ডাকাত দল তার সরবারহকৃত সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করত। সবুজ খানের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে ৩টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার মো. মিন্টু পাটোয়ারী পেশায় একজন ছদ্মবেশী সিএনজি ও অটোরিকশাচালক। এই পেশার আড়ালে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতির জন্য তথ্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সুবিধাজনক সময় বাসা/দোকান/ব্যাংক/ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত।
গ্রেফতার মো. রাসেল মোল্লা পেশায় একজন গাড়িচালক। সে তার এই পেশার আড়ালে ডাকাত দলের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করত। সে ডাকাত সরদার সবুজের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদেরকে নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরণ করে ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়।
অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, মিন্টু রাসেলের দেওয়া তথ্য মতে, ভিকটিমের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত। রাসেলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার ইকবাল মিয়া ডাকাতির জন্য সবুজের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সে প্রায় তিন বছর ধরে নিজ বাড়ি মাদারীপুর জেলা শিবচর থেকে ঢাকায় এসে ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ডিবি পুলিশ সেজে ডাকাতি করে আবার শিবচর চলে যেত। তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার মনিরুল ইসলাম পেশায় একজন দর্জি। গত এজ বছর ধরে সে তার দর্জি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মিন্টুর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা রয়েছে।
