ডেঙ্গু আক্রান্তে এক মশারির নিচে পুরো পরিবার

পিবিএ ডেস্ক: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ৬ নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডে ঢুকতেই চোখে পড়ে মানুষের অনবরত আনাগোনা। সারিবদ্ধভাবে সাজানো বেডেগুলোর বেশিরভাগেই মশারি টাঙানো রয়েছে। সব মশারির নিচেই রয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তবে পুরো ইউনিটে রোগীর চেয়ে স্বজনদের সংখ্যাই বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা তাদেরকে দেখতে এসেছেন।

কেউ কেউ রোগী দেখেই চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ রোগীর পাশে বসে গল্প করছেন। এ জন্য প্রায় সব রোগীর বিছানার পাশে চিকিৎসক, নার্স ছাড়াও দুই একজন মানুষ সব সময়ই চোখে পড়ে। কিন্তু ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বি-১ বেডের চিত্র একটু অন্য রকমের। কারণ সেখানে এক রোগীর মশারির নিচে একটি শিশুসহ তিনজনকে দেখা গেল। আবার বেডের তিন পাশেই বসে আছেন আরও তিনজন। সবাই নাকি ওই এক রোগীরই আত্মীয়-স্বজন। শুধু তাই নয়, বিছানার নিচে দেখা গেল হাড়িপাতিল ও রান্না করার কিছু সরঞ্জাম। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিলে বাধ্য হয়েই হাসপাতালে রান্না করে খান রোগীর স্বজনেরা।

পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই বিছানায় ভর্তি রোগীর নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে এখানে এসেছেন। রফিকুল ইসলাম পিবিএ‘কে বলেন, আমি ১৪/১৫ দিন যাবত অসুস্থ। আমার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায়। এলাকাতেই আমার ডেঙ্গু হয়েছে। তারপর মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৩ দিন ছিলাম। সেখানে থেকে ৫ দিন আগে এই হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

রফিকুল ইসলামের বেডে তার চার বছরের মেয়ে ও স্ত্রী। আর বেডের নিচে মেঝেতে তার মা এবং অন্য পাশে ছোট ভাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনেরা থাকছেন। রফিকুলের ছোট ভাই রাশেদ জানান, তার ভাই মানিকগঞ্জে হকারি ব্যবসা করে সংসার চালান। ২ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করেন তিনি। গত ৫ দিন যাবত তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মা ও ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জন মানুষকেই হাসপাতালে থাকতে হয়। কেউই রোগীকে ছেড়ে বাড়ি যেতে চায় না। তিনি আরও জানান, খাবারের টাকা বাঁচাতে তারা এখানেই সামান্য রান্না করেন। কখনো বা আবার বাইরে থেকেও খাবার আনেন।

এদিকে, গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ১৩ হাজার ৬৩৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর নথিভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংস্থাটির হিসাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ৮ জন। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে অন্তত ৪৭ জনের মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে এক নারী গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন।

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...