পিবিএ ডেস্কঃ ডেঙ্গু অসুখটিকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বহু জায়গায় দণ্ডকজ্বর নামে অভিহিত করা হয়েছে। মুশকিল হল, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের শারীরিক পরিস্থিতি কেমন হবে তা নির্ভর করে তাঁর রোগ-প্রতিরোধী ক্ষমতার উপর। দেখা গিয়েছে, যাঁর ইমিউনিটি কম, তাঁর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণের প্রভাবও বেশি। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতিও দ্রুত ঘটেছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আসলে আমরাই সচেতন নই। যেখানে-সেখানে জল জমিয়ে রাখার অভ্যেসের কারণেই ডেঙ্গু মশার বাড়বাড়ন্ত ঘটে। তাই যতদিন না আমরা এই কুঅভ্যেস ত্যাগ করছি, ততদিন আমাদের ডেঙ্গুর মতো ভাইরাসে আক্রান্ত হতেই হবে। অতএব, আগে থেকে নিজের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থা যত শক্তিশালী করে তোলা যাবে, ততই ডেঙ্গুর মতো ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতাও বাড়বে। অতএব প্রথমে দেখে নেওয়া যাক আয়ুর্বেদ মতে কোন কোন প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম—
গুলঞ্চঃ প্রতিদিন গুলঞ্চ সেবনে দেহের রোগ-প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ে। আলাদা করে গুলঞ্চ সত্ত্ব বাজারে কিনতে পাওয়া যায় পাউডার আকারে। আবার ইচ্ছে করলে বাড়িতেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে গুলঞ্চ সেবন করা যেতে পারে। গুলঞ্চের ডাঁটা থেঁতো করে একটা গ্লাসের পানিতে ভিজিয়ে রাখুন বেশ কিছুক্ষণ। দেখা যাবে পাত্রের তলার দিকে সাদা আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। এবার ওই জল ছেঁকে পান করলেই চলবে। গুলঞ্চের আরও গুণ রয়েছে। দেহের মেটাবলিজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে ফ্যাট মেটাবলিজমের হার বাড়ায়। লিভারের কার্যক্ষমতাও বাড়ায়। লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়লে দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও বাড়ে।
তুলসীঃ তুলসী নানাভাবে সেবন করা যায়। চাইলে তুলসীপাতা থেঁতো করে তার রস পান করা যেতে পারে। আবার স্যালাডেও তুলসীপাতা দিয়ে খাওয়া যায়। তবে একটা কথা বলে রাখা দরকার। অনেকে গরম পানিতে বা গ্রিন-টি’র মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে তা পান করেন। এমন অভ্যেসে তুলসীর পূর্ণতর গুণ মেলা সম্ভব নয়। কারণ তুলসী পাতায় অনেক এসেনশিয়াল অয়েল থাকে। তাপে এই ধরনের এসেনশিয়াল অয়েলগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এবার আসা যাক ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পেঁপের ভূমিকা নিয়ে আলোচনায়।
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় পেঁপের পাতা ও পেঁপে ফল—দুটিই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। অবশ্য রোগীর বমি করার প্রবণতা থাকলে পেঁপে পাতার রস খাওয়ালে বিশেষ ফল মেলা মুশকিল।
পেঁপে পাতার রসঃ প্রথমেই একটা কথা বলে নিই— পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গুর ভাইরাস দমনে কোনও সাহায্য করে না। প্রত্যেক ভাইরাস শরীরের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে। তারপর নিজের থেকেই ভাইরাসের প্রকোপ কমে যায়। উদ্বেগের বিষয় হল, ডেঙ্গু ভাইরাস যে ক’দিন মানবশরীরে থাকে, সেই সময়ের মধ্যে শরীরের নানা ধরনের ক্ষতি করে। ফলে প্রাণহানির একটা আশঙ্কা থেকে যায়। এমনকী দেখা গিয়েছে ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে অনেকের দেহে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আর এমন হয় প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ার কারণে। ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে রোগীর দেহের সদ্য তৈরি হওয়া অণুচক্রিকাও ভেঙে যায়। ফলে ক্রমশ প্লেটলেট কাউন্ট কমতে থাকে। পেঁপে পাতার রসে থাকা বিশেষ উপাদান ‘প্লেটলেট ফিক্সেসিং প্রপার্টি’ প্লেটলেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নতুন প্লেটলেট তৈরি হতেও সাহায্য করে। ফলে ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণের মারাত্মক ফলাফল থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
মনে রাখবেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক পাঁচ মিলিগ্রামের বেশি পেঁপে পাতার রস পান করার প্রয়োজন নেই।
পেঁপে ফলেও রয়েছে একইরকম উপাদান। ফলে ডেঙ্গু রোগীকে পাকা ফলের রস যেমন পান করানো যায়, তেমনই পাকা পেঁপেও খাওয়ালে ফল মেলে। পেঁপে পাতা ও পেঁপে ফলের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় আরও দুটি ওষুধ দেওয়া যায়—
হিঙ্গুলেশ্বর রস ও সঞ্জীবনী বাটা এক গ্রাম মাত্রায় রোগীকে দেওয়া যায়। রোগীকে টানা সাতদিন ধরে এই ওষুধগুলি দেওয়া যায়। মনে রাখবেন ডেঙ্গু রোগীর ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগীর ডায়ারিয়া, বমি হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে বাড়িতে ফেলে রেখে চিকিৎসা করাতে যাবেন না। সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। ডিহাইড্রেশন আটকাতে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে ফলের রস, ডাবের পানি পান করানো উচিত। আঙুর, কিসমিসের মতো ফল বাচ্চাদের প্রতিদিন দেওয়া যেতে পারে। এই ফল জ্বরের প্রকোপ আটকাতে সাহায্য করে।
বয়স্কদের এই সময় খুব সাবধানে থাকতে হবে। বয়স্কদের এমনিতেই রোগ-প্রতিরোধী ক্ষমতা কম থাকে। ফলে প্রবীণদের সহজেই ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণে কাবু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বয়স্কদের ইমিউনিটি বাড়াতে রোজ একটা করে আমলকী খাওয়াতে পারেন। আর যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা আমলকী আর যষ্টিমধু একসঙ্গে খেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ফল মিলবে। তবে বয়স্করা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে এবং উপসর্গের বাড়বাড়ি দেখলে বাড়িতে ফেলে রাখা একেবারেই উচিত নয়। হাসপাতালে ভর্তি করাই শ্রেয়।
পিবিএ/এমআর