‘ডেভিল হান্টে’ রাঘববোয়াল ও চুনোপুঁটি কেউ ছাড় পাবে না

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ডেভিলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অপারেশনটা চলবে তত দিন পর্যন্ত, যত দিন পর্যন্ত ডেভিল এখান থেকে মুক্ত না হবে।’

গাজীপুরে গত শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ–বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরদিন থেকে শুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান। এর নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। গতকাল রোববার পর্যন্ত এই অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৩০৮ জনকে। তাঁদের বেশির ভাগই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। চলমান ডেভিল হান্ট অভিযানে এ ধরনের বিষয়ে নির্দেশনা কী থাকবে—জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়, এ জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা, তা কিন্তু আমরা নিচ্ছি। এটা শুধু থানার ওপরে আমরা রাখিনি। এ নিয়ে একাধিক কমিটিও করা হয়েছে, যেন কোনো নির্দোষ মানুষ কোনো অবস্থাতেই সাজা না পান। যারা মিথ্যা মামলা করেছে, আইনের ভেতর থেকেও তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে হবে।’

ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় কারা পড়বেন, সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা ডেভিল শব্দটার অর্থ তো জানেন—শয়তান। যারা শয়তান, তাদেরই ধরা হবে। এখন ছোট শয়তান নাকি বড় শয়তান, সেটা দেখব না।’ এ অভিযানে চুনোপুঁটি ধরা পড়ছে, রাঘববোয়ালেরা ধরা পড়ছে না—এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেভিল হান্ট ঘোষণা করার পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। প্রথম দিনই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বড়–ছোট কোনো ভেদাভেদ নেই। যে আসবে এই জালে, সে ধরা পড়বে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের সাম্প্রতিক উত্তেজনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী ও সাংবাদিকদের আমি ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে পার্শ্ববর্তী দেশের একটা জবাব দিয়েছে। তারপরও আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে বলব, আইন যেন কোনো সময় কেউ নিজের হাতে তুলে না নেয়। এই বিষয়গুলোতে বাহিনীর যারা আছে, তারাই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সে সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী ভালো কাজই করেছে।’

পবিত্র রমজানে জিনিসপত্রের দামের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজানে কিন্তু দুটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। রোজা মুসলমানদের। বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, তাঁদের ধর্মীয় কোনো উৎসব হলে তাঁরা জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেন। কিন্তু এখানে রমজানের সময়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়ানোটাকে তারা সওয়াব হিসেবে নেয় কি না, আমি জানি না। এটা কিন্তু সওয়াবের মধ্যে পড়ে না। এই যে তারা দাম বাড়িয়ে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে, এতে তারা কিন্তু শুধু জনগণের কাছে নয়, ওপরওয়ালার কাছেও দায়ী থাকবে। আমি আশা করছি, এবার জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এবার আমাদের আমদানি খুবই ভালো। ডাল, ছোলা, খেজুর—এগুলোর সরবরাহ কিন্তু খুবই ভালো। আর তেলেও কোনো সমস্যা নেই।’

সারের সংকট নিয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক বলেন, বিএডিসি সার দিতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কোন এলাকায় সংকট, আপনি বলেন। কোনো এলাকায় সংকট হলে ডিসির (জেলা প্রশাসক) সঙ্গে কথা বলেন। এখন কিছু কিছু ডিলার শয়তানি করছে। এ জন্য আমি একটি নির্দেশনা দিয়েছি, যে ডিলারগুলো শয়তানি করবে, কমিশনাররা এগুলো পরিবর্তন করে দেবে। আর কিছু কিছু ডিলার দাম একটু বেশি নিচ্ছে। এদের ক্ষেত্রে সঠিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কৃষকেরা আমাদের প্রাণ। তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলে বেলা একটার পর পর্যন্ত। সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন...