কামরুজ্জামান লিটন,ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর(কেষ্টপুর) গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশী ভিয়েতনামী ফল লাল ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ইটালী ফেরত আপন তিন ভাই মোঃ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, আঃ রশিদ, আঃ মমিন। এই তিন ভাই একসাথে ইটালীতে বসবাস করতেন। তারা ইটালীর নাগরিক। আঃ মমিন প্রায় ৩০ বছর আগে ইটালী চলে যান। তারপর একে একে সিদ্দিক ও রশিদ ও ইটালিতে চলে যাই। তারা একসময় ইটালির নাগরিক হয়ে যাই। তারা ইটালি থেকে এসে এই লাল ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন ২০১৭ সালে ।
সিদ্দিক বলেন আমি ইটালিতে ড্রাগন ফল ও চাষ দেখতাম। দেখে মনে হতো আমার দেশ বাংলাদেশ ও এই ড্রাগন ফলের চাষ করবো।
আমি দেশে এসে প্রথম তিন বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি। এখন আমি প্রায় দশ বিঘা ড্রাগন ফলের চাষ করছি।
আমার দেখে আমার দুই ভাই ও ড্রাগনের চাষ শুরু করে। সিদ্দিক মিয়া বলেন প্রথমে আমাকে অনেকে অনেক রকম কথা বলতো ইটালি থেকে এসে পাগল হয়েছে। কিসের চাষ করছে। অনেকে বলে বাবা তুমি আবার ইটালি ফিরে যাও ইত্যাদি ইত্যাদি কথা।
তার দেখাদেখি এলাকায় অনেক কৃষক এবং যুবক এই ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। ড্রাগন ফল চাষী মো: সিদ্দিক মিয়া জানান, এ বছর খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৬ লক্ষ টাকা লাভের আশা করছেন। সবচেয়ে আশার কথা তিনি সম্পুর্ণ নিরাপদ উপায়ে কীটনাশক বাদে এই ফল চাষ করছেন।
ড্রাগন চাষী সিদ্দিক জানান, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে কালিগঞ্জ, মহেশপুর থেকে ড্রাগনের চারা বা বিজ এনে ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করি।
তার জমিতে এখন প্রায় ১০০০টি পিলার রয়েছে। প্রত্যেক পিলারে ৪টি করে ড্রাগন গাছ রয়েছে। এক বছর পর থেকেই তিনি ড্রাগন ফল সংগ্রহ করতে পারছেন।
মোঃ সিদ্দিক বলেন বাগান তারকাটা দিয়ে ঘেরা, পিলার, চারা,জমি প্রস্তুত,লেবারসহ সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি ৪ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে এই চাষ খুব ব্যয়বহুল। যেমন লাভ আছে তেমন খরচ ও আছে।
ইতিমধ্যে প্রায় ৬ লাখ টাকার ড্রাগন ফল তিনি বিক্রি করেছেন। আগামী ৬মাস তার বাগান থেকে আরো ৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল তিনি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি।
একটি পিলার থেকে তিনি বছরে প্রায় ২০/৩০ কেজি ড্রাগন ফল সংগ্রহ করতে পরবেন। বছরের গরমের ৬ মাস ড্রাগন গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায় বলে তিনি জানান। তবে প্রথম বার বেশী ধরে। শীত কালে ফল ধরে না।
ড্রাগন চাষী সিদ্দিক আরো বলেন ঝিনাইদহ সদরে আমিই প্রথম ড্রাগন ফল চাষী আমার দেখাদেখি এখন অনেকেই এই চাষে ঝুকে পড়ছে। আমাদের মাঠে এখন শুধুই ড্রাগনের বাগান, নতুন নতুন ড্রাগনের বাগান তৈরী হচ্ছে।
তিনি বলেন যখন মাঠে ড্রাগনের ফুল ফোটে সমস্থ মাঠ সাদা দেখা যাই কি এক অপরুপ দৃশ্য। এই ফুলের বৈশিষ্ট্য রাতে ফুল ফোটে সকালে সুর্যের আলো লাগলে নিভে যাই।
নতুন ড্রাগন চাষী রবিউল ইসলাম বলেন আমি আগে ট্রাকের ব্যাবসা করতাম। আমার ট্রাকের ব্যাবসা আছে। সিদ্দিককের ড্রাগন চাষ দেখে। আমি এ বছর প্রায় তিন বিঘা ড্রাগন ফলে চাষ শুরু করেছি। গাছ পিলার বেয়ে উঠে গেছে। রবিউল বলেন আমি ছাড়া আমাদের গ্রামের ফিরোজ,ফেরদৌস, মিরাজ,নাজির, আরো অনেকেই ড্রাগনের চাষ শুরু করেছে। আগামীতে আরো অনেকেই ড্রাগন চাষ করবে বলে মনে হচ্ছে।
সিদ্দিক বলেন ড্রাগন ফল চাষ একটি লাভজন চাষ। একবছর থেকে দুই বছরের মধ্যেই ড্রাগন বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। এই ফল একনাগাড়ে প্রায় ১৫/২০ বছর পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর কিছু কিছু পুরাতন আগা ছেটে দিতে হয়। গাছ গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ফল ধরে। তিনি বলেন সম্পুর্ণ নিরাপদ উপায়ে কীটনাশক বাদে এই ড্রাগন ফল চাষ করছেন। ড্রাগন ফুল আসার পর থেকে ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযোগী হয় ।
ফল বিক্রেতারা তার বাগান থেকে এই ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এবং তিনি প্যাকেট জাত করে ঢাকার কাওরান বাজারে আড়তে পাঠান, আড়ৎদাররা বিক্রি করে টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন বলে তিনি জানা।
পাইকারী বাজারে বড় বড় ফল গুলো অধিকাংশ সময় ৩০০-৩৫০টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তিনি মুলত ভিয়েতনামী লাল জাতের ড্রাগন চাষ করছেন। তিনি বলেন, এই ফলের ভিতরের কালার দেখতে খুব সুন্দর, ডায়বেটিস রুগিদের জন্য খুবই উপকারী ফল। পুষ্টি গুনে ভরা এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এলাকায় যদি ড্রাগন ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে সারা বছর এই জেলা থেকে ড্রাগন ফল সরবরাহ করা সম্ভব বলে মনে করেন।
জানতে চাই আপনি বা আপনারা তিন ভাই কি আবার ইটালি ফিরে যাবেন কি না। সিদ্দিক বলেন না ভাই আর ফিরে যাব না। তবে মাঝে মাঝে ইটালি আমাদের যেতে হয়। তবে আমার প্রিয় বাংলাদেশের মত এত সুন্দর দেশ আর কোথাও দেখিনি। এক সময় আমার মাতৃভুমি বাংলাদেশেই থেকে যাব আর কোথাও যাব না।
পিবিএ/এসডি