তাহজীবুল আনাম, পিবিএ, কক্সবাজার : পর্যটন শহর কক্সবাজারের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পৌরবাসী। সুষ্ঠু তদারকি না থাকায় শহরে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অর্ধ-সহস্রাধিক ড্রেন আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নালায় জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ, মাছির উত্পাত ও মশার কামড়ে জন-জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নানা বয়সের মানুষ। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরে বসবাসকারীদের সচেতনতার অভাবে ড্রেনেই আবর্জনা ফেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আবর্জনার ডিপোতে পরিণত হচ্ছে ড্রেনগুলো।
সূত্র মতে, কক্সবাজার শহরজুড়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ছোট-বড় অর্ধসহস্রাধিক ড্রেন রয়েছে। শহরের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে অসংখ্য ছোটবড় ছরা। বিগত কয়েক বছর থেকে পাহাড়ি মাটি ও নগরবাসীর ফেলা বর্জ্যে ভরে উঠেছে এসব নালা ও ছরাগুলো। এ আবর্জনা থেকেই জন্ম নিচ্ছে অজস্র মশা-মাছি।
শহরের কচ্ছপিয়া পুকুর এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থী তাসনিম নিশু জানায়, বড় ক্যাং এলাকার সামনে, দীঘির মোড় ও বউ বাজার এলাকার ড্রেনটির পূর্ব-পশ্চিমাংশ আবর্জনায় ভরে থাকায় দুর্গন্ধে হাঁটা কষ্টকর হয়ে গেছে। পেশকার পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও ইসলামী ব্যাংক এলাকার দোকানদার মহিউদ্দিন মহিম বলেন, বড় বাজার এলাকার ড্রেনটির দৈর্ঘ্য সব চেয়ে বেশি। এ কারণে এখানে আবর্জনার পরিমাণও মাত্রাতিরিক্ত। আলীর জাঁহাল এলাকার আরিফুল ইসলামের মতে বিগত কয়েক বছর আগে শহরের বেশ কয়েক জায়গায় পরিকল্পিত ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। এরপরও সচেতনতা না থাকায় শহরে বসবাসকারী লোকজন ড্রেনেই ফেলছে ময়লা-আবর্জনা। শহরের বাজারঘাটা এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের হেলালী জানান, পৌরসভা সৃষ্টির পর ড্রেনগুলো সচল ছিল। জমির মূল্য বৃদ্ধির কারণে পাহাড় কেটে জমি সমতল করার ধুম পড়ে। ফলে কাটা মাটি এসে এগুলো ভরাট হয়ে গেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ দায়সারা ভাবে কাজ করায় এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির ড্রেন ভরাট হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারে মানুষের বসবাস প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নিত্য নতুন স্থাপনা তৈরি হলেও তদারকি না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরিমাপ মতো ড্রেন রাখছে না। এ কারণে ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
কক্সবাজার পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্স্পেক্টর কবির হোসেন বলেন, এ মডেল পৌরসভাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ১২ ওয়ার্ডে ১২ সুপারভাইজারের নিয়ন্ত্রণে শ্রমিক ও সুইপার মিলে লোকবল রয়েছে প্রায় ৩০৪ জন। এরা মাস্টার রোলে কাজ করছেন। তারা সড়ক ও ডাস্টবিনের আবর্জনা টানতে গিয়ে ড্রেন পরিষ্কারে সময় দিতে পারেন না।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোলতান আহমদ সিরাজী জানান, আবর্জনার দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উত্পাতের কারণে পেটের পীড়া নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। গ্রীষ্মকালে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, সচেতনতার অভাবে ড্রেনগুলোকে ময়লার ডিপো বানায় লোকজন। তবে পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজার শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ নানা বিষয়ে পৌরবাসীকে সচেতন করতে প্রচারণার পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করি বিদ্যমান সকল সমস্যার সমাধান সহজ হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, আর্থিক লাভের কথা ভেবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন ভবন মালিকরা। তাই এখন জীবনমান নিম্নমুখী হচ্ছে।
পিবিএ/এমএসএম