পিবিএ,ঢাকা: বিশ্বে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে মাস্কের চাহিদা বাড়তে থাকে। এরইমধ্যে রোববার দেশে তিনজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর এই চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরনের মাস্কের দাম।
যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, সবার মাস্ক ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, এই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। শুধু যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের সংস্পর্শে গেলেই অন্যদের সংক্রমণের ভয় আছে। সংক্রমণের শিকার রোগীকেই শুধু মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানোর জন্য সুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহারের দরকার নেই। অযথাই মানুষ মাস্ক কিনতে ছুটছেন। এ কারণে খামোখা শুধু দাম বেড়ে যাচ্ছে।
সোমবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দিয়ে দশ-বারো গুণ বেশি দামে মাস্ক বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করার কথা বললেও তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
সোমবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ০১৭৭৭-৭৫৩৬৬৮ নম্বরে বারবার ফোন দিলেও তাদের সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা।
অভিযানের ব্যাপারে তথ্য জানতে সোমবার দুপুরে পক্ষ থেকে ওই ফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও রিসিভ করা হয়নি। কল বারবার কেটে দেওয়া হয়েছে।
দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সার্জিক্যাল, কাপড়ের ও ফিল্টার মাস্কের কয়েকগুণ বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মাস্কের সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ৫ টাকার জিনিস মুহূর্তেই ৬০ টাকা হয়ে যায়। দেশে কোনো আইন নাই?
সোমবার (৯ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, শান্তিনগর, সেগুন বাগিচা, মালিবাগ, খিলগাঁও এলাকা ঘুরে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
রাজধানীর এসব এলাকার কোনো ফার্মেসিতে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক। দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরই ক্রেতাদের ভিড় পড়ে ফামের্সিগুলোতে। তারা জানিয়েছেন, যা ছিল সব বিক্রি হয়ে গেছে।
আর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা এমনিতেই কম। তাই দোকানে বেশি রাখা হয় না। যা ছিল সব গতকালই শেষ।
বাজারে দুই থেকে তিন ধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়। যেগুলো ৪৫, ৭৫ ও ১২০ টাকা দামে বিক্রি করা হতো বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার না পাওয়ায় ক্রেতাদের এখন হ্যান্ডওয়াশ নিতে দেখা গেছে। সুযোগ বুঝে ৭৫ টাকার হ্যান্ডওয়াশ দেড়গুণ দাম বাড়িয়ে ১২০ টাকা হাঁকা হচ্ছে।
খিলগাঁওয়ের জনতা ফার্মেসির বিক্রেতা শফিকুল জানান, সারা বছরে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে রোববার রাতের মধ্যেই দোকানের সব হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সঙ্কট। যাদের কাছে হ্যান্ডওয়াশ রয়েছে সেগুলোও বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।
বাজারে সার্জিক্যাল মাস্ক মাত্র ৫ টাকায় পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, ১০ টাকা মূল্যের কাপড়ের মাস্কের দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ২০ টাকার কাপড় ও ফোম মিশ্রিত মাস্কের দাম চাওয়া হচ্ছে বাজারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ২৫ টাকা মূল্যের ফিল্টার মাস্কের দাম এখন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
ক্রেতারা বলছেন, দেশের ক্লান্তিকালে ব্যবসায়ীরা কখনো জনগণের পক্ষে থাকে না আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা পেঁয়াজ-রসুন কাণ্ড দেখেছি এবার মাস্ক নিয়েও একই কাণ্ড ঘটছে।
আনোয়ারা নামে এক ক্রেতা বলেন, ৫ টাকার ওয়ান টাইম সার্জিক্যাল মাস্কের দাম ৬০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। গত পরশু ২৫ টাকা দিয়ে ফিল্টার মাস্ক কিনেছিলাম সোমবার সে ফিল্টার মাস্কের দাম ১৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বিপদে পাশে না থেকে উল্টো মানুষের বিপদে লাভের চিন্তা করছে।
তবে আনোয়ারার কথার সঙ্গে একমত নন পল্টন এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, গুলিস্তান ও মিডফোর্ড এলাকায় পাইকারি বাজারে ১০ টাকার মাস্কের দাম ৮০ টাকা হয়েছে আমরা কী করবো। আমরা বেশি দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করছি।
জনতা ফার্মেসির বিক্রেতা রবি জানান, আমাদের দোকানে হ্যান্ড স্যানিটাজারের সঙ্গে যেসব সার্জিক্যাল মাস্ক ছিলো সেগুলোও বিক্রি শেষ। আবার পাইকারি বাজারে মাস্কও পাচ্ছি না। অনলাইন শপগুলোতে তারাও মাস্কের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ৫ থেকে ১০ গুণ।
পিবিএ/এমআর