ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে রাতে আবার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ি মোড় এলাকায় বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে ওই এলাকায় এলে তাদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এরপর সংঘর্ষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চানখাঁরপুল মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া চলে। দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলার পর আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। তারা পুরান ঢাকার দিকে চলে যান।
এর আগে, বিকেল চারটার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়ক ও মলচত্বর এলাকায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের বাধায় দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়তে ব্যর্থ হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েন।
জানাজা শেষে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ক্যাম্পাসে কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ওই মিছিলে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আবার সূর্য সেন হলের সামনে এসে জড়ো হন। এরপর ঘণ্টাখানেক পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলে। পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। অপরদিকে, শিক্ষার্থীরা মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সামনে অবস্থান নেন। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেলের ফলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা।
পুলিশের বিপক্ষে টিকতে না পেরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই এলাকার হলগুলোর ভেতরে চলে যান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সূর্য সেন হলের সামনে এসে অবস্থান নেয় পুলিশ। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল হক সেখানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ বন্ধ করে পুলিশ। তখন হলগুলো থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ের দিকে চলে যান। সেখানে তারা অবস্থান নিলে পুলিশ আবারও তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। আধা ঘণ্টাখানেক পর সেখান থেকে চলে যান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তখন নীলক্ষেত মোড় থেকে সরে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলোতে রাতেও অনেক শিক্ষার্থী রয়ে গেছেন। ছাত্রীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তারা হল থেকে বের হবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার না হবে ততক্ষণ তারা হলেই থাকবেন।