পিবিএ,ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতা থাকছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বাস চলাচল চলবে। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র দেখিয়ে যেকোনও পরিবহনে চলাচল করতে পারবে। তবে অহেতুক ঘোরাফেরার জন্যে কোনও ধরনের যান ব্যবহার করা যাবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ভোটের আগের দিন বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ডিএনসিসিতে মেয়র উপনির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে। একইসঙ্গে এই সিটিসহ দক্ষিণের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট নেওয়া হবে।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক ইমার্জেন্সি বিষয় আছে। এয়ারপোর্টে একজন যাত্রী যাবে, তার জন্য কি বন্ধ থাকবে? অ্যাম্বুলেন্স যাবে, এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের জিনিসগুলো যাবে, এরকম জিনিসগুলো বিবেচনা করে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে এভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যাপকভাবে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।’
প্রধান সড়কে বাস চলাচল করতে পারবে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান।
ঢাকা শহরে প্রচুর প্রাইভেট ভেহিকেল আছে, এগুলো চলাচলের ওপর আপনার নির্দেশনা কী— জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘না, প্রাইভেট ভেহিকেল নির্ধারিত কোনও কাজ ছাড়া চলাচল করতে পারবে না। ঘোরাফেরা করার জন্য তো আর চলবে না। এটা নিয়ে বেশি আলোচনা করার দরকার নেই। এটা ঢাকা শহর তো অনেক ধরনের ইমার্জেন্সি বিষয় থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যারা থাকবেন, তারা এগুলো বুঝবেন।’
সাধারণ ছুটির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ঢাকা শহর পুরোটাতেই ছুটি থাকবে, এটা আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানিয়েছি। স্কুল-কলেজ ও সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।’
এ সময় যান চলাচলের ক্ষেত্রে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলবে। আর জরুরি প্রয়োজনে যারা যান (প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল) ব্যবহার করবে, তারা আমাদের কাছ থেকে স্টিকার সংগ্রহ করবে। এছাড়াও পুলিশকে যদি কেউ তার প্রয়োজনের কথা বলে, তারাও কিন্তু তাদের অনুমতি দেবে। অহেতুক ঘোরাফেরার জন্য অকারণে তো যানবাহন চলতে দেওয়া যাবে না। অন্যথায় একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র দেখিয়ে যান ব্যবহার করতে পারবে।’
সব দলের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে তারা অংশ নেয়নি। একটা কারণ হলো মাত্র এক বছর মেয়াদে তারা নির্বাচিত হবেন। এরপর আবার নির্বাচন হবে। সে কারণে ভোটার ও প্রার্থীদের আগ্রহ কম থাকতে পারে। আর সব দল অংশগ্রহণ করেনি, এতে আমাদের কিছু করার নেই। এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা তো সবাইকে আহ্বান করেছিলাম, যেহেতু তারা আসেনি, আমাদের কিছু করার নেই।’
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে কমিশনের কোনও ব্যর্থতা রযেছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের কোনও ব্যর্থতা নেই। আমাদের কোনও দুর্বলতা নেই। সঠিক নির্বাচন করতে যাবতীয় প্রস্ততি নিয়েছি। তারা রাজনৈতিক মাঠে না গেলে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে, এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে তো হবে না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের প্রতি অনাস্থা নয়, দলগুলো অংশগ্রহণ করলে আমরা খুশি হতাম, না করাটা আমাদের জন্য একটা অস্বস্তিকর অবস্থা।’
ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরে সিইসি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষক থাকবে। বিজিবি, পুলিশ ও র্যা বের টিম টহলে থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এরই মধ্যে কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর আইনানুগ নির্বাচন। ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনও কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনও ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
পিবিএ/জেআই