পিবিএ,ঢাকা: মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাত চরম আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ, জরুরী বিভাগসহ ভিতরের প্রতিটি ওয়ার্ড, চিকিৎসকদের রুমে অবাধে চলছে এদের কোম্পানির ঔষধ প্রচারের কার্যক্রম। এতে যেমন ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম তেমনি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনদের। এদের প্রতি চিকিৎসক, নার্স, স্টাফরাও অতিষ্ঠ। এসব ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা মানছেননা হাসপাতালে ভিজিটের কোনো নিয়ম কানুন । ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগ, জরুরী বিভাগ ও ভিতরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
আজ বুধবার সকালে হাসপাতালের বহির্বিভাগের মূল ফটকের পাশে দেখা যায় কয়েকটি মোটরসাইকেলের উপরে বসে আছে একটি ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের ৭ জনের একটি দল। কাছে যেতেই বুঝা গেলো নিয়মিত কার্যক্রম ও কোম্পানীর প্রচারের জন্য প্রতিনিধিদের করনীয় ও নিয়ম কানন শিক্ষা দিচ্ছেন কোম্পানীরই এক কর্মকর্তা।
কিভাবে হাসপাতালের ভিতর ঢুকতে হবে, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ কোন চিকিৎসক কর্মকর্তা, ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ, আনসারসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে হবে। রোগীর স্বজনদের তাদের ঔষধ সম্পর্কে কিভাবে বুঝাতে হবে এবং প্রেসক্রিপশন লিখার সময় চিকিৎসককে কিভাবে অনুরোধ করতে হবে সেসব কৌশল গুলো।
প্রায় প্রতিটি রুমেই দেখা যায় রোগী দেখার সময় চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি । কোনো রুমে একজন আবার কোনো রুমে একাধিক। পুরো হাসপাতালে প্রায় ২শ থেকে আড়াইশ লোক রয়েছে ঔষধ কোম্পানির। রোগী দেখার পর প্রেসক্রিপশন লেখা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের কাছে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন নিজের কোম্পানির ঔষধের নাম।নিজেদের কোম্পানীর ঔষধের নাম লিখানোর পর সাফল্যের হাসি নিয়ে “থ্যাংক ইউ” জানিয়ে পাশে সড়ে দাড়াচ্ছেন আবার। এভাবেই চলতে থাকে সারাক্ষণ।
আর নিজেদের কোম্পানির এই ঔষধের নাম লিখাতে বড় ধরণের অফার ছাড়াও প্রতিনিয়তই চলে উপহার সামগ্রী যেমন, কলম, নোট প্যাড, টিস্যু, নাস্তার প্যাকেট সহ অনেক আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী প্রদান এছাড়া ঔষধের প্যাকেটও। অনেক সময় দেখা যায় ডিউটি শেষে বাসায় ফিরার সময় কোম্পানীর লোকদের দেওয়া এসকল উপহার সামগ্রী ব্যাগে পুরে নিতেও বেগ পেতে হয় চিকিৎসকদের।
একটা রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখার পর চিকিৎসকের রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও এসকল কোম্পানির লোকদের জন্য ভুগান্তি পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের। রুম থেকে রের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে রোগীর হাত থেকে প্রেসকিপশন হাতিয়ে নিয়ে তাদের কোম্পানির ঔষধেরর নাম আছে কিনা তা যাচাইবাছাই। যদি নাম থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হিরিক পড়ে যায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রেসক্রিপশন ছবি তুলার। প্রেসকিপশন দেখাতে না চাইলে অনেক রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যাবহারও করতে দেখা যায় এদের।
এমন দৃশ্য হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেও। কিছুক্ষণ পরপর দলবেঁধে এসে ভর্তি রোগীর চিকিৎসাপত্র যাচাইবাছাই করে দেখেন তাদের কোম্পানীর ঔষধের নাম আছে কিনা। নাম থাকলে ঔষধ সম্পর্কে কিছু বিজ্ঞাপনও দিয়ে যান তারা। অনেক রোগীই তাদের বেশভূষা দেখে চিকিৎসক মনে করে স্যার সম্বোধন করে রোগীর বিভিন্ন সমস্যার কথাও বলছেন তাদেরকে।
এ বিষয়ে কথা হলে ঢামেক হাসপাতাল বহির্বিভাগ এর ওয়ার্ড মাস্টার আবুল বাশার জানান, এদের হাসপাতালে ঢুকার উপর বিধিবিধান রয়েছে। সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেলা ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত এদের হাসপাতালে ঢুকার অনুমতি রয়েছে। এছাড়া অন্য সময় তাদেরকে হাসপাতালে ঢুকার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এরা কোনো নিষেধাজ্ঞা না মেনে হরহামাশাই হাসপাতালে ঢুকে ঔষধের বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা করে থাকে। সাধারণত ডাক্তারদের সাথেই সম্পর্ক করে এরা হাসপাতালে ঢুকে। আর এদেরকে বাঁধা দেওয়ার দায়িত্ব আনসারদের। তবে তারাও কোনো কিছু বলেনা এদের।
পিবিএ/বাখ