পিবিএ ডেস্ক: রাজধানীতে রাস্তায় নারীদের যৌন হেনস্থা হওয়ার খবর নতুন নয়। লোকলজ্জার ভয়ে আগে এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলেও এখন অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবাদী নারীরা। সম্প্রতি গাবতলী থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে বাসে পাশের আসনের যাত্রী দ্বারা যৌন হেনস্থার শিকার হন এক কর্মজীবী নারী। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারী চড়-থাপ্পড় দিয়ে লোকটিকে বাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য করেন।
ওই তরুণী ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন। ক্যাপশনে জুড়ে দেন ঘটনার বর্ণনা। ভিডিওতে দেখা যায় যৌন হেনস্থাকারী ব্যক্তি তার একটি হাত তরুণীর স্পর্শকাতর স্থানে লাগাচ্ছেন, সঙ্গে তরুণীর করা প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন সাবলীলভাবে। বুদ্ধিমান তরুণী কথার ফাঁকে ফাঁকে লোকটির নাম-পরিচয় বের করছেন।
লোকটির নাম আহমেদ জামাল। অফিস উত্তরায়। এই তরুণীকে আহমেদ জামাল নামে লোকটি নিজের ভিজিটিং কার্ডও দিয়েছিলেন। কার্ডে তার পরিচয়ে দেখা যায় পুষ্টি এবং সৌন্দর্য্য নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটার তিনি। কিন্তু কার্ডে থাকা মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ ছিল।
ফেসবুকে লেখা তরুণীর বক্তব্যের কিছু অংশ বার্তা সংস্থা পিবিএ’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
উনি বেশ কিছু সময় পর কনুই আমার বুক বরাবর দিচ্ছেন, আমি বিষয়টা সহজভাবে নিতে চেয়েও পারিনি, আমিও কনুই দিয়ে বসলাম যাতে কিনা লোকটা কনুই না আগাতে পারে। ভেবেছি লোকটা সতর্ক হবেন কিন্তু না তাতে তিনি ক্ষান্ত নন।
সাহস দেখলাম লোকটার, আমার জামার কাপড় সরিয়ে নিয়ে গেছেন, এমনকি হাত না সরিয়ে আমার কথার জবাব দিয়ে যাচ্ছেন।
আমি অসুস্থ এটা হয়তো সকলেই জানেন, আবার অনেকেই জানেন না, শব্দ, জোরে কথা বলা, এমনকি হৃদয় বিদারক কিছুই এখন সইতে পারি না, (হৃদ) সমস্যা ধরা পরার পর আমি শুধু সেকেন্ডের কাটার সাথে হার্ট বিট গুণতে পারি এতোটা সমস্যা।
লোকটি গল্পে গল্পে তার অফিসের কার্ড আমায় দেয়, আমি নিয়ে নেই কারণ এটাতে তার পরিচয় পেতে কাজে লাগবে, তখন আমি ভিডিও করি আর কার্ডটি ব্যাগে রাখি।
তখনকার পরিস্থিতির কথা বর্ণনা দিতে তিনি আরও বলেন, রীতিমতো আমার শরীর কাঁপছিলো, শরীর খারাপ করছিলো জানি না কি করে উত্তরা পৌঁছালাম, বাসায় এলাম। এতটা মনোবল না থাকলে হয়তো কিছুই করতে পারতাম না। শরীর খারাপ হয়ে রাস্তায় পরে যেতে হতো। তবে একটা ইচ্ছে পূরণ হলো তা হলো মন মতো চড় কষাইতে পারছি, সুস্থ থাকলে আরো মন মতো দিতাম এতে ভুল হতো না।
তরুণীর দেওয়া ভিডিওটি এ পর্যন্ত দেখা হয়েছে প্রায় ১২ লাখবার। শেয়ার হয়েছে প্রায় দুই হাজারবার।
ফেসবুকে তার ভিডিওটি দেওয়ার পর গণমানুষের সমর্থন পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘যতটা সাপোর্ট দেখলাম ফেসবুকে তার এক অংশ আমি বাস্তবে পাইনি তাই বলছি কি সোচ্চার দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলেও হয়তো কিছুটা সময় বাঁচতে পারবেন কিন্তু কোনো না কোনো সময় ধরা পড়বেন কারো না কারো হাতে।’
নারীদের সাবধান করে ওই তরুণী আরও লিখেন, ‘এমন শুধু বাসে হয় তা নয়, ঘরে হয় পরিচিতদের মাঝে হয়, দয়া দেখাতে গিয়ে চেপে যাবেন না ভাই, বন্ধু, চাচা, মামা ইত্যাদি খাতিরে চেপে যাবেন না। কারণ চেপে গেলে জীবন দিতে হবে কোনো নারীকে, শুরুতেই রুখে দাঁড়ান।’
পিবিএ/এমএস