তরুণী রোগীকে চুমু দিয়ে চেম্বার খোয়ালেন পপুলারের চিকিৎসক

পিবিএ,ঢাকা: রাজধানীর পপুলার হাসপাতালের এক চিকিৎকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আসার পর তাকে আর চেম্বারে বসতে দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অচিন্ত কুমার নাগ এই তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত চিকিৎসককে আর চেম্বার করতে দেয়া হবে না।

সোমবার (১৭ জুন) হাসপাতালের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান অচিন্ত কুমার নাগ এ তথ্য জানান।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই তরুণী জানান, শনিবার (১৫ জুন) তার সাথে অশালীন আচরণ করেন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ এবং লেজার কসমেটিক সার্জন ডা. মো. শওকত হায়দার। ব্রণের ইনফেকশন আছে কিনা দেখার ছলে ওই ডাক্তার তার গালে চুম্বন করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওই তরুণী। ঘটনার পর পরই পপুলার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেন তিনি।

এরপর বাসায় ফিরে ওই তরুণী ডাক্তারের কাছে ফোন করে তার কৃতকর্মের কারণ জানতে চাইলে ডা. শওকত বলেন, ‘ওটা কিছু না, ইনফেকশন আছে কিনা দেখছিলাম।’ পরে তরুণী বলেন, ‘এমন তো আমি কখনো দেখিনি, ইনফেকশন আছে কিনা সেটা কোনো ডাক্তার কি ঠোঁট দিয়ে চেক করে?’ এ সময় ডাক্তার শওকত হায়দার ওই তরুণীকে বলেন, তিনি দুঃখিত।

ঘটনার বিবরণে ওই তরুণী জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ত্বকে ব্রণের সমস্যা নিয়ে পরিচিত একজনের রেফারেন্সে প্রথমবার পপুলার হাসপাতালের ওই ডাক্তারের কাছে যান তিনি। পরবর্তীকালে চিকিৎসার প্রয়োজনে আরও কয়েকবার প্রায় বাবার বয়সী ডাক্তারের কাছে যান তিনি।

সর্বশেষ গত শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে ওই তরুণী ডা. শওকতকে জানান তার ত্বকের সমস্যা আবার বেড়েছে, রাতে তিনি চেম্বারে বসবেন কিনা? এ সময় ওই ডাক্তার চেম্বারেই আছেন জানিয়ে মেয়েটিকে তখনই যেতে বলেন।

পরে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে ওই তরুণী জানতে চান তার সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আছে কিনা। এ সময় সেই ডা. শওকত বলেন, যদি সে চায় তবে একটা ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। তবে ইনজেকশনটি কোমরে দিতে হবে। মেয়েটির ইতস্ততভাব দেখে ওই ডাক্তার তাকে বলেন, কাপড়ের উপর দিয়েই ইনজেকশন দেয়া যাবে।

মেয়েটি তার অভিযোগে জানায়, ইনজেকশন দিতে রাজি হয়ে পেসেন্ট টেবিলে শুলে ওই ডাক্তার মেয়েটির বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকেন। মেয়েটি প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, কোথায় ইনজেকশন দিলে ভালো হয় তা চেক করে দেখছিলেন তিনি।

পরে ওই তরুণী সেই ইনজেকশন হাতেই দিতে বলেন। ওই তরুণী অভিযোগ করেন, ডাক্তার ইনজেকশন দেবার পর তুলা দিয়ে চেপে না ধরে না তার জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেন। এ অবস্থায় মেয়েটি তাড়াতাড়ি সরে এসে ডাক্তারের ফি দিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এ সময় সেই ডাক্তার আরেকবার তার গালের ইনফেকশনটি দেখতে চান। গাল দেখার ছলে ডা. শওকত ওই তরুণীকে চুম্বন করেন।

এ ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই রোগী।

অচিন্ত কুমার নাগ বলেন, ‘আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি ঢাকার বাইরে ছিলেন বা ঢাকাতেই আছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তিনি এলে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তিনি অবশ্যই আর এখানে কন্টিনিউ করবে না, তাকে চেম্বারে বসতে দেয়া হবে না।’

অচিন্ত কুমার নাগ আরও বলেন, ‘চিকিৎক জানিয়েছেন মেয়েটা তার বন্ধুর মেয়ের বন্ধু। এ রকম হবার কথা নয়। তবে যে যদি আমার ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি, দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

তারপরই তাকে আমরা হাসপাতালে আসতে বলেছি যেন সামনাসামনি কথা বলতে পারি। তিনি জানিয়েছেন তিনি আসবেন। ওভার ফোনে তো আর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া বা দেয়া যায় না, যার জন্য আসতে বলেছি—বলেন অচিন্ত কুমার নাগ। তিনি আরও জানান, ওই চিকিৎসক সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার দুদিন পপুলারে বসতেন। যারা ফুলটাইম এখানে বসেন তিনি তাদের মতো না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসককে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...