তানজিদ-হৃদয়ের ব্যাটিংয়ে দাপুটে জয় বাংলাদেশের

বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। বিপিএলের পর এবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও তার অভিষেকটা হলো দারুণ। মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দায়িত্বশীল এক ফিফটির ইনিংস খেলেছেন তিনি। তাওহিদ হৃদয় শেষদিকে তামিমকে বেশ ভালো সঙ্গ দিয়েছেন। এতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামের সাগরিকায় আজ (শুক্রবার) বৃষ্টির বাগড়া দেওয়ার আভাস আগেই মিলেছিল। যা বারবার বিঘ্ন ঘটিয়েছে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে। এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপর্যয়ে পড়েছিল সফরকারী রোডেশিয়ানরা। কিন্তু ৮ম উইকেটে ৭৫ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে ভর করে জিম্বাবুয়ে শুধু লজ্জাই এড়াল না, সেই সঙ্গে ১২৪ রানের সম্মানজনক পুঁজিও দাঁড় করায়। যা বাংলাদেশ পেরিয়েছে ১৫.২ ওভারে। টাইগারদের হয়ে এদিন একাধিকবার জীবন পাওয়া তামিম সর্বোচ্চ করলেন ৬৭ রান, এছাড়া হৃদয় ৩৩ রান করেন।

জিম্বাবুয়ের ছোট লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। ব্যাট হাতে অনেকদিন ধরেই অধারাবাহিক ওপেনার লিটন দাস শুরুটা করেন বাজেভাবে। ব্লেসিং মুজারাবানির করা দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড তিনি। গুড লেংথে ফেলা বলটি লিটনের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্প ভেঙে দেয়। এতে ৩ বলে মাত্র ১ রানেই থামল সর্বশেষ ১৯ ইনিংস আগে ফিফটির দেখা পাওয়া লিটন। যা বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের জন্যও বড় চিন্তার কারণ!

দ্বিতীয় ইনিংসের তৃতীয় ওভার শুরু হতেই বৃষ্টির হানা। ফলে আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে খেলা বন্ধ থাকে। এরপর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্রিজে এসেই একই ওভারে দু’বার ক্যাচ তোলেন তানজিদ। মুজারাবানির বলে প্রথমে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন, উইকেটরক্ষক ও বোলারের প্রতিযোগিতায় ক্যাচটি নিতে গিয়ে ফসকে যায়। একই ওভারের শেষ বলে কাভারে তানজিদের ক্যাচ ছাড়েন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজাও। যার জন্য ম্যাচটিতে হার দিয়ে বড় মাশুল দিতে হলো সফরকারীদের।

জীবন পেয়ে তামিম খোলস ছেড়ে বের হন। এরপর খেলেছেন পুল শট ও কাউ-কর্নার দিয়ে ছক্কার মার। ৭.২ ওভারে বাংলাদেশ যখন ১ উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান করেছে, তখনই ফের বৃষ্টির অনাকাঙ্ক্ষিত আগমন। এতে প্রায় ১৫ মিনিট পরে আবার খেলা শুরু হয়। এভাবে বারবার ওঠানামায় হয়তো ক্রিজে ফিরেই মনোযোগ হারান শান্তরা। টাইগার অধিনায়ক ২৪ বলে ২১ রান করে ক্যাচ দেন শন উইলিয়ামসকে। সেখান থেকে বাংলাদেশের বাকি পথটা পাড়ি দিয়েছেন তানজিদ-হৃদয় জুটি। দুজনে মিলে শেষ পর্যন্ত গড়েন ৬৯ রানের জুটি। আর তাতেই স্বাগতিকদের বড় জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

৩৬ বলে অভিষিক্ত তামিম ফিফটি তুলে নেওয়ার পর, শেষ পর্যন্ত তিনি ২ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৭ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আরেক অপরাজিত ব্যাটার হৃদয় ১৮ বলে ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৩ রান করেন। জিম্বাবুয়ের হয়ে একটি করে উইকেট শিকার করেছেন মুজারাবানি ও লুক জঙ্গুই।

এর আগে প্রথম ইনিংসে মেঘলা আকাশের নিচে বয়ে চলা বাতাসের মাঝেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যেন শুরু হয়েছিল উইকেট-বৃষ্টি। মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডার। স্কোরবোর্ডে ৪১ রান যোগ করতেই ৭ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় পড়ার শঙ্কায় ছিল সফরকারীরা। কিন্তু ৮ম উইকেটে মাসাকাদজা–মাদান্দের ৬৫ বলে ৭৫ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে ভর করে শুধু লজ্জাই এড়াল না, সেই সঙ্গে সম্মানজনক পুঁজিও দাঁড় করাল সফরকারীরা। নির্ধারিত ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস।

সফরকারীদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন ক্লাইভ মাদান্দে। এছাড়া ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ৩৮ বলে ৩৪ রান করেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। অথচ আর কোনো ব্যাটারই এদিন ২০ রানও করতে পারেননি। চার ব্যাটার আউট হন শূন্য রানে।

স্বাগতিক টাইগারদের হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেছেন দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ। এছাড়া দুটি উইকেট শিকার করেছেন শেখ মেহেদী।

আরও পড়ুন...