উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করার দাবি জানিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীবৃন্দ।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর অবসর ভবনে অনুষ্ঠিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানায় বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির এই সদস্যরা।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডব়্প এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রুবিনা ইসলাম, প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর, তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, ডব়্প। উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।
সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাকপণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, সদস্য (সিনিয়র সচিব), কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন। তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ ধূমপানের মতই পরোক্ষ ধূমপান সমান ক্ষতিকর। রেস্টুরেন্ট, অফিস ও এয়ারপোর্টের মত পাবলিক প্লেসে এবং পাবলিক পরিবহনে স্মোকিং জোনের কারণে পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হচ্ছে বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাবলিক প্লেসে এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করতে হবে।
মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব), বিডিআর তদন্ত কমিশনের সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সমাজের কোনো অংশেই অবদান রাখা যায় না।
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করতে হবে। তাই উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশের জন্য প্রজ্ঞাপন জারির কোনো বিকল্প নেই।
সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, যা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। তাই শুধু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন নয়, তামাক কোম্পানিগুলোর প্রভাব বিস্তারও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মো. হায়দার আলী খান, পরিচালক, অর্থ ও প্রশাসন, ডব়্প। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরৎ পাঠানো হয়।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংশোধনীটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স আকারে পাশের জন্য সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া পরিমার্জনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করে।
কমিটির সদস্যদের মতামত ও পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পরিমার্জিত খসড়াটি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করবে।
তিনি আরও বলেন, ১ জানুয়ারি ই-সিগারেট/ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে গেজেট প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতির একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জানিয়ে ডব়্প-এর পুক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়, তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সরকারকে ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণও নিষিদ্ধ করতে হবে এখনই।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এস এম শমসের জাকারিয়া (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সামশাদ বেগম, অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), মো. তৌহিদুর রহমান (অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব), মো. মিজানুল হক চৌধুরী, প্রশাসক, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ডর্প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।