সদ্য আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় দলের নেতাকর্মীরা। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, তারেক রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে।
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলা, অর্থ-পাচার এবং সারা দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ আরো অন্তত ২০টির বেশি মামলা হয় বলে জানান আইনজীবীরা।
এর মধ্যে ছয়টি মামলার বিচার শেষে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আর কিছু মামলা স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। তবে, কোন মামলাতেই তিনি সাজা ভোগ করেননি। তাকে পলাতক দেখিয়ে বিচার হয়েছে এসব মামলার।
আইনজীবীরা বলছেন, মানহানির অভিযোগে দেশের প্রত্যেক জেলায় মামলা হয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে এখনো সেভাবে জানা যায়নি। বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য মামলাগুলো ওঠে এসেছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশ চলার সময় গ্রেনেড হামলা হয়। সেই হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন চারশোর বেশি নেতাকর্মী। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর হামলার ঘটনার পুনঃতদন্ত শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার অধিকতর তদন্ত করা হয়।
এরপর তারেক রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ মামলায় মোট আসামি ছিল ৫২ জন। পরে এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এ মামলায়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা: ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসেবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মামলায় কারাদণ্ড: ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলো দুদক। অভিযোগ ছিল মি. রহমান ও তার স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের বাইরেও ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থের অবৈধ সম্পদ রয়েছে। গত বছরের দুই আগস্ট এ মামলায় মি. রহমানকে নয় বছরের এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
অর্থপাচার মামলা: ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেয়। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মানহানির মামলায় দণ্ড: ২০১৪ সালে লন্ডনে এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার ও পাক বন্ধু উল্লেখ করে তারেক রহমান নানা অবমাননাকর কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ এনে ওই সময় নড়াইলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন নড়াইলের আদালত। শুধুমাত্র ঢাকার আদালতেই মানহানির অভিযোগে কমপক্ষে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা: তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তাকে এবং একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে যোগসাজশ করে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। এ ছাড়া নোয়াখালীতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আরেকটি মামলা আছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।