পিবিএ,ঢাকা: রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার স্কাইপিতে লন্ডন থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকাল ৫টা থেকে তিন ঘন্টা চলে এই কথপকথন।
তারেক রহমান এ সময় দলীয় প্রার্থীদের বক্তব্য শোনেন। প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ভোট কারচুপির তথ্যগুলো তাকে জানান। এ সময় নির্বাচনে নানা অনিয়ম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের হামলা ও মামলার ঘটনা তারেক রহমানকে অবহিত করেন দলীয় প্রার্থীরা।
প্রার্থীদের কথা শোনে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ‘অনিয়ম’ ও ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগ এনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত দেন তারেক রহমান। ৬৪ জেলা থেকে একজন করে ৬৪ জন ধানের শীষের প্রার্থী হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবেন এমন নির্দেশনা দেন তিনি।
জানা গেছে, এদিন কয়েক দফায় প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান। প্রায় প্রত্যেক নেতাই নির্বাচনের আগে, ভোটের দিন ও নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় তারেক রহমান পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে তাদের মতামতও জানতে চান।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে নেতারা নির্বাচনে নানা অনিয়মের চিত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তুলে ধরেন। বিএনপি গণহারে মামলা করবে না বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের জানান।
এক্ষেত্রে প্রত্যেক জেলায় একজন করে ৬৪টি জেলা থেকে মোট ৬৪ জন প্রার্থী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ মামলা করা হবে। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের মামলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ওই নেতা আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করতে চায় বিএনপি। ট্রাইব্যুনাল আমাদের মামলাগুলো আমলে না নিয়ে সরকারের নির্দেশমতো রায় দিলে সেটাও আমরা বিশ্বকে জানাব।
বৈঠকে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও ছিলেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি, শরিফুল আলম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জিকে গউছ, আজিজুল বারী হেলাল, লুৎফর রহমান কাজল, শামা ওবায়েদ, মিজানুর রহমান মিনু, রফিকুল আলম মজনু, মাইনুল ইসলাম খান শান্ত, এবিএম মোশাররফ হোসেন, জহিরউদ্দিন স্বপন, নিতাই রায় চৌধুরী, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, হাজী মুজিব, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, শাজাহান মিয়া প্রমুখ।
বৈঠক শেষে একজন প্রার্থী জানান, প্রথমে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে। এরপর দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয় এটা কাউকে চাপিয়ে দেয়া হবে না, দল থেকে কোনো প্রার্থী মামলা করতে চাইলে করতে পারবে।
এরপর আবার সিদ্ধান্ত হয় প্রতীকী অর্থে কয়েকটি আসনে করা হবে। কিন্তু তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৬৪ জেলা থেকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হবে। যারা মামলা করবে তাদের ডেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আইনজীবী নিয়োগসহ যাবতীয় খরচ দলের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।
বৈঠকে অংশ নেয়া পাবনা-৪ আসনের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিধি অনুযায়ী আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারা মামলা করবেন।
এছাড়া দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠকে অংশ নেয়া চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা জানান। সূত্র জানায়, বৈঠকে এক নেতা ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওই নেতা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়সহ সবপর্যায়ের কমিটি গঠন করার বিষয়ে তারেক রহমানকে বলেন।
পিবিএ/এফএস