তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন একের পর এক বসতভিটা

পিবিএ,রংপুর প্রতিনিধি: তিস্তা নদীর ভাঙন মোর ঘরের কাইনটাত (কাছে) আইচ্চে। কখন যে ভাঙি নদীত যায়। আল্লায় জানে কোনটে যামো, কায় হামাক জাগা দেবে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন নদীভাঙন হুমকিতে থাকা রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গদাই এলাকার আব্দুল মালেক। আব্দুল মালেকের মতো এলাকার শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় দিন যাপন করছে।

প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যার পানি নেমে গেলেও রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়ার চরাঞ্চলে তিস্তার ভাঙন শুরু হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার কয়েকটি চরগ্রামে নদীভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে।

ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ নদী রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী। কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়নের গদাই এলাকায় দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে ২০ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। অব্যাহত ভাঙনে চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে শতাধিক পরিবার।

অস্তিত্ব রক্ষায় বাড়ির সামনে ভাঙন রোধে নিজ উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলছেন অনেকেই। কয়েক দফায় নদীভাঙনের শিকার গদাই এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, এবার ভাঙলে ভিটার কিছুই থাকবে না। বাঁধের ওপর অথবা অন্য কোথাও স্থান নিতে হবে। বাপ-দাদার ভিটামাটি ছাড়ি অন্যটে যাবার মন চায় না। প্রত্যেক বছর নদী ভাঙলেও হামরা কষ্ট করি অ্যাটেকোনো মাটি কামড়ে পড়ি আছি। কিন্তুক এদোন করি আর কতদিন থাকা যায়। কৃষক শওকত আলীর এক বছরে ৭০ শতাংশ আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। এখন পাঁচ শতক বসতভিটা জেগে আছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই কৃষক বলেন, এবার বসতভিটা নদীত চলি গেইলে হামার আর কোনো জমি থাইকপার নয়। নদী হামার সউগ শ্যাষ করি দেইল বাহে।

গদাই এলাকায় মাস আগে ১৮০ মিটার স্থানে নদীর ভাঙন রোধে দুই হাজার বালুর বস্তা ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানির স্রোতের তোড়ে বেশির ভাগ বস্তা ভেসে গেছে। এলাকাবাসী ঘরবাড়ি অন্য স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গদাই গ্রামে ৪শত পরিবারের বাস। ভাঙনের শিকার অন্তত ২০ পরিবার চলে গেছে। শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে। পাঞ্জরভাঙা চরেও ভাঙন শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, নদীর পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সেসব এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এক মাস আগে কাউনিয়ার গদাই চরে দুই হাজার বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন...