থানায় কিভাবে এবং কেন জিডি করবেন?

পিবিএ,ঢাকা: আমাদের দেশের সাধারণ পাঠ্যক্রমে এখনো দেশের প্রচলিত আইন সেভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়নি, যে কারণে আমরা অনেকেই প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় এই বিষয়গুলো জানিনা। থানায় জিডি বা জেনারেল ডায়েরীকরণ এরকমই একটি বিষয়। আমি কট্টর আইনী ধারাগুলোর উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ না করে একেবারেই সহজ ভাষায় বিষয়টি কি এবং কিভাবে আপনাদের কাজে লাগবে- সেটি তুলে ধরতে চেষ্টা করব।

কেন জিডি করবেন?

কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা করছেন বা ভয় পেয়েছেন। বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারছেন না। হারানো কোনো জিনিস উদ্ধার করতে চাচ্ছেন। এমন বিষয়ে জিডি করতে পারেন। এটি একটি আইনগত বিষয়। কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডিকার্ড), পেশাগত পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো সার্টিফিকেট (সনদ) দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলেও জিডি করা যায়। এছাড়া কেউ কারো সম্পদের ক্ষতি করতে চাইলে, হত্যার হুমকি দিলে। সন্দেহভাজন কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় বা হারানো কিছুর জন্য জিডি করা হলে ওই ঘটনা ঘটার পর দোষী ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে জিডির গুরুত্ব অনেক। বা হারানো জিনিস খুঁজে পেতে এবং আইনি সহায়তা নিতে জিডি করা জরুরি।

জিডি লিখবেন কিভাবে?

পুলিশের দেয়া নির্দিষ্ট ফরমে অথবা সাদা কাগজেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর জিডি করা যায়।
অবশ্যই আপনাকে আশঙ্কার কারণ, যার জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে বা যে হুমকি দিয়েছে, তার নাম, ঠিকানা, হুমকির স্থান, তারিখসহ বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে জিডিতে। কিছু হারিয়ে গেলে তার বিস্তারিত বিবরণের সঙ্গে সেই জিনিসের একটি ফটোকপি যুক্ত করে দেবেন। এ বিষয়ে আপাতত কোনো মামলা করবেন না। তবে মনে রাখতে হবে পুলিশ যদি মনে করে যেকোনো গুরুতর অপরাধ ঘটেছে, তাহলে জিডি থেকেও মামলা হতে পারে।

জিডি করার স্থান হবে কোন থানায়?

জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকায় অবস্থিত থানাতেই জিডি করা উচিত। জিডি করতে যেকোনো পরামর্শের জন্য থানায় দায়িত্ব পালনরত অফিসারের সহযোগিতা নিবেন। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাকে লিখে দিতে অনুরোধ করবেন। বিনিময়ে কোনো টাকাপয়সা দিতে হবে না।

আবেদনের একটি কপিতে জিডি নম্বর, সময়, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল দেয়ার পর আপনাকে প্রদান করা হবে। জিডিটি নথিভুক্ত হবে। আপনার কপিটি আপনি নিজের জন্য সংরক্ষণ করবেন। জিডি হওয়ার পর তা কর্তব্যরত কর্মকর্তা থানার ওসির কাছে পাঠাবেন। আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনাটি আমলযোগ্য হওয়ার মতো হলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে। কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ তা আপনাকে অবহিত করবে।

পুলিশ দেশের যেকোনো নাগরিকের জিডি গ্রহণ করতে বাধ্য। তবে অস্তিত্বহীন, গুরুত্বহীন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বিষয়ে বিষয়ে জিডি গ্রহণ করতে পুলিশ গুরুত্ব কম দেয়। আবার একই বিষয়ে বা তুচ্ছ বিষয়ে বার বার জিডির বিষয়টিও পুলিশ ভালোভাবে নিবে না।

আইনে কোথায় জিডির কথা উল্লেখ আছে?

জিডি করতে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪৪ ধারা ও ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারা অনুসরণ করতে হয়। থানায় রাখা নির্ধারিত ফরমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে জিডি করবেন। থানায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বর্ণনাটি জিডির ৬৫ নম্বর ফরমে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

অনেকে জিডি ও এজাহারের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে জিডি ও এজাহারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। জিডি হলো কোনো ঘটনা ঘটার আগেই ভয় বা আশঙ্কা থেকে জিডি করতে হবে। নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিত আকারে জানাতে হয়। আর কোনো একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে অভিযোগ দায়ের করেন সেটি এজাহার। তবে, অনেক দেখা যায় সময় গুরুত্ব দিয়ে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে জিডিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়।

পিবিএ/ইকে

আরও পড়ুন...