পিবিএ ডেস্ক : থানায় ঢুকে পুলিশের সামনেই এক যুবককে একের পর এক চড় মারছেন এক ব্যক্তি। তার সঙ্গে থাকা মহিলাও ওই যুবককে পর পর কয়েকবার চড়, লাথি মারলেন। তারপরই ওই ব্যক্তিতে বলতে শোনা যায়, ‘তোমাকে যদি আধঘণ্টার মধ্যে থানায় ঢুকিয়ে দিতে না পারি, তা হলে তোমাকে বাড়িতে এসে মেরে ফেলব!’ যুবককে বার বার ক্ষমা চাইতেও দেখা যায়। কিন্তু তারপরও চলতে থাকে মারধর। রবিবার ৫ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কে ওই ব্যক্তি? কেনই বা ওই যুবককে মারছিলেন?
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের আলিপুরদুয়ারের। ভিডিওতে যে ব্যক্তি ও মহিলাকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে তারা আলিপুরদুয়ারের জেলা প্রশাসক নিখিল নির্মল ও তার স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণাণ। আর যে যুবককে মারধর করা হচ্ছিল তিনি ওই জেলারই বাসিন্দা। নাম বিনোদ। কিন্তু কেন এ ভাবে ওই যুবককে মারলেন জেলাশাসক ও তার স্ত্রী? কী-ই বা তার অপরাধ?
ঘটনার সূত্রপাত ফেসবুকে করা একটি মন্তব্যকে ঘিরে। অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন বিনোদ। তার বিরুদ্ধে ফালাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন জেলা প্রশাসক। তার পরই বিনোদকে আটক করে ফালাকাটা থানায় নিয়ে আসা হয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই থানায় সস্ত্রীক হাজির হন নিখিল নির্মল। থানায় তখন আইসি সৌম্যজিত্ রায় ছিলেন। থানায় ঢুকেই বিনোদ টেনে নিয়ে এসে মারধর শুরু করেন জেলা প্রশাসক ও তার স্ত্রী। পর পর চড় মারা হয় বিনোদকে। সেই সঙ্গে তাকে শাসাতেও দেখা যায় নিখিল ও নন্দিনীকে। ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক বিনোদকে বলছেন, ‘তোমাকে যদি আধঘণ্টার মধ্যে থানায় ঢুকিয়ে দিতে না পারি, তাহলে তোমায় বাড়িতে গিয়ে মেরে ফেলতে পারি।’ এখানেই থামেননি তিনি। তাকে এটাও বলতে শোনা যায়, ‘আমার জেলায় আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবে না।’
জেলা প্রশাসকের স্ত্রী নন্দিনীও দয়া করেননি বিনোদকে। তাকে দেখা যায় ওই যুবককে চড়, লাথি-গুঁতো মারতে। পাশাপাশি হুমকি দিতে শোনা যায়, ‘কে বলেছে এই পোস্টটা দিতে? বলো…। এত বড় কথা বলার সময় মনে ছিল না?’ বিনোদকে বার বার ক্ষমা চাইতেও দেখা যায়। কিন্তু তারপরেও মারধর করেন নিখিল নির্মল ও নন্দিনী।
পুলিশের কাছে বিনোদ জানিয়েছেন, জেলাশাসকের স্ত্রী তার ফেসবুক বন্ধু। কিন্তু তিনি যে জেলা প্রশাসকের স্ত্রী সেটা জানতেন না বিনোদ। গত রোববাবার রাতে ফেসবুকে জেলা প্রশাসকের স্ত্রীর সঙ্গে চ্যাট করছিলেন বিনোদ। সেখানে একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়। তারপর নন্দিনী তাকে একটি গ্রুপে অ্যাড করেন। সেই গ্রুপে বিনোদকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন অনেকে। বিনোদের দাবি, তখনই তিনি জানতে পারেন নন্দিনী জেলাশাসকের স্ত্রী। বিনোদের দাবি, ‘নন্দিনী জেলা প্রশাসকের স্ত্রী জানার পর আমি লিখি আপনি তো জেলা প্রশাসকের আলোয় আলোকিত। এরপরই অশালীন ভাষায় গালাগালি দেওয়া হয় আমায়। পাল্টা আমিও গালাগালি দিই।’
জেলা প্রশাসক ও তার স্ত্রীর এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। নানা রকম প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, থানায় ঢুকে ওই যুবককে মারধর করার এখতিয়ার কে দিল জেলা প্রশাসককে? ভিডিওটি প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসককে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পিবিএ/জিজি