দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হলো তুতেনখামেনের সমাধি !

ngsversion

পিবিএ ডেস্ক : মিশরের ফারাও তুতেনখামেনকে নিয়ে রহস্যের অন্ত নেই। বিখ্যাত এই ফারাওয়ের মমি প্রায় দশ বছর পর খুলে দেওয়া হল দর্শকদের জন্য। ৩ হাজারেরও বেশি বছর আগে এই বালক ফারাওয়ের মৃত্যু হয়েছিল। ১৯২২ সালে প্রথম বার ব্রিটেনের প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এই ফারাওয়ের মমিতে প্রবেশ করেছিলেন। সত্যিই কি ১৯২২ সালে ওই মমিটি উদ্ধারের পরে সেই খনন কার্যের সঙ্গে যুক্তদের রহস্যময় মৃত্যুর পিছনে ছিল অভিশাপ? এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। লেখা হয়েছে বহু বই। কেবল অভিশাপই নয়, বালক রাজা তুতেনখামেনকে নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদদের আগ্রহের শেষ নেই। ২০১১ সাল নাগাদ মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের আমলে কাঠের ফ্লোর, বাতি, সমাধি সব বদল করা হয়েছিল। তার আগে থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বন্ধ ছিল এই সমাধিস্থল। এর ফলে তুতেনখামেনের সমাধিটি সরানো হয় আগের জায়গা থেকে। তার পর থেকেই ফের দর্শকদের জন্য সমাধিক্ষেত্র খুলে দেওয়ার কাজ চলছে।

অন্যতম মূল্যবান এই সমাধি সরানোটাই মস্ত বড় কাজ ছিল। লস অ্যাঞ্জেলসের গেটি কনসার্ভেশন ইনস্টিটিউটের কমিউনিকেশনের অধিকর্তা নেভিলে অ্যাগ্নিউ বলেন, ১২ জন ব্যক্তি মন্ত্র পড়তে পড়তে সমাধিটি সরাচ্ছিলেন। তারা বলছিলেন, সমাধি একটু কাত হলেই নাকি অপমৃত্যু ঘটবে ওই কর্মীদের। অ্যাগ্নিউ বলেন, জলীয় বাষ্পের সঙ্গে পর্যটকদের নিশ্বাস মিশে সমাধিক্ষেত্রের ক্ষতি হচ্ছিল। তাই যাতে সমাধিতে সতেজ হাওয়া প্রবেশ করে চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি করতেই প্রত্নতত্ত্ববিদ, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদদের নয় বছর সময় লেগে গিয়েছে, জানান তিনি। লিনেনে মোড়া মমিটি ১৩৩২-১৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব সময়েরর। কেভি৬২ সমাধিতে নীল নদের পশ্চিম দিকে, লুক্সর শহরের বিপরীতে, রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় ৬৫০ কিমি দূরে এই সমাধিক্ষেত্র। তুতেনখামেনের কবরে আঁকা ছবি থেকে দেখা গিয়েছে, তার নেতৃত্বে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ছবি। যা দেখে অনেকের দাবি, সিরিয়ায় যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল তুতেনখামেনের।

তুতেনখামেনের মৃত্যু ঘিরে রহস্য আজও অমলিন। যেমন রহস্য রয়েছে তার রানি নেফারতিতির কবর নিয়েও। রহস্য আর তুতেনখামেন— চলে হাতে হাত ধরেই। ১৯৬৮ সালে লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে ঘোষণা করেন, সম্ভবত মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল তুতেনখামেনের। তুতেনখামেনের মাথায় মিলেছে রক্ত জমাট বাঁধার চিহ্ন, জানান গবেষকরা। স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছিল হত্যার তত্ত্ব। বহুদিন পর্যন্ত সেই তত্ত্বই চালু ছিল। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, ঘোড়ার গাড়ি থেকে পড়ে গিয়েই মারা গিয়েছিলেন তুতেনখামেন। গবেষকরা পরে বলেন, হত্যা বা দুর্ঘটনা নয়, গবেষকদের মতে রোগের কারণে স্বাভাবিকভাবেই মারা গিয়েছেন মিশরের এই বালক ফারাও।

২০০৫ সালে জাহি হাওয়াস বলেন, সম্ভবত ম্যালেরিয়ায় ভুগেই মৃত্যু হয়েছিল তুতেনখামেনের। পরে ২০১০ সালে জার্মান গবেষকরা দাবি করেন, তার রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব ছিল।২০১৪ গবেষকরা জানান, যেহেতু প্রাচীন মিশরে ভাই-বোনেদের মধ্যে বিয়ে বৈধ ছিল। হয়তো সেই কারণেই বাবা-মায়ের কাছ থেকে রক্তের কোনও রোগ পেয়েছিলেন তুতেনখামেন।

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...