দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা

দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা

পিবিএ ঢাকা: রাজধানীর দুই সিটির আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। বৃহস্প‌তিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সা‌ড়ে ১০টা থে‌কে রাজধানীর কমলাপুর সা‌দেক হো‌সেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে এ কার্যক্রম শুরু হ‌য়।

নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা নির্ধা‌রিত ওয়ার্ডের মনোনয়নপত্র বিতরণ কর‌ছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থী ও তাদের পক্ষের লোকজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ নিচ্ছেন।

কোনো কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী একা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন, আবার অনেকে দলবল ও আত্মীয়-স্বজন সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামা‌জিক সংগঠ‌নের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলর প‌দের জন্য মনোনয়নপত্র নি‌চ্ছেন।

একাধিক কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ কর‌লেও দ‌লের সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বলে মনে করেন তারা। স্থানীয় নির্বাচনে শুধু রাজনৈতিক দল নয় সামাজিক অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসা কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল মো‌মেন বলেন, ‘আসন্ন দ‌ক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচ‌নে ৪৪ নম্বর ওয়‌া‌র্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসে‌বে আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলাম। আমি স্থানীয় যুবলী‌গের ওয়া‌র্ড সভাপ‌তি। আশা কর‌ছি, দল থে‌কে আমি নো‌মি‌নেশন পা‌ব।’

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসা আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আলমাস হোসেন বলেন, ‘উত্তর মান্ডা ৭২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। এর আগে আমি মান্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপির প্রার্থী হিসে‌বে নির্বাচন কর‌তে চাই। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আশা করছি, আমি জয়ী হব।’ তবে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হ‌বে বলে তি‌নি জানান।

একই এলাকার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী শফিকুল আলম শামীম বলেন, ‘আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। এলাকার জনগণ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল। আমি এক বছর এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এর ধারা‌বাহিকতা অব্যাহত রাখ‌তে আসন্ন সিটি নির্বাচনে আমি এবারও ৭২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলাম। আমি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি। আশা করছি, দল থে‌কে আমাকে মনোনয়ন দিয়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্মকা‌ণ্ডের সহযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে।’

৭১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা খায়রুজ্জামান বলেন, ‘আমি বর্তমান কাউন্সিলর। গত এক বছরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশা করছি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

সংর‌ক্ষিত ২৪ নম্বর ওয়া‌র্ডের (৬১, ৬২ ও ৬৩) নারী কাউন্সিলর প্রার্থী সা‌লেহা আক্তার বলেন, ‘সাবেক দনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আমি টানা সাড়ে ৯ বছর কাউন্সিলর ছিলাম। আমি এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। আসন্ন নির্বাচনে আমি সংরক্ষিত ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলাম। আশা করছি, আমার দল বিএন‌পি আমাকে মনোনয়ন দে‌বে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি অবশ্যই জয়লাভ করব।’

এদিকে, রোববার (২২ ডি‌সেম্বর) ঢাকার দুই সি‌টি করপোরেশন নির্বাচনের তফ‌সিল ঘোষণা ক‌রে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফ‌সিল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর (ডিএসসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি।

বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়েই ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিতে ভোট হবে। সম্প্রতি দুই সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিতসহ ৪৮ জন কাউন্সিলর জানুয়ারিতে নির্বাচন না করতে কমিশনে আবেদন করেছিলেন। তারা হুমকি দিয়েছিলেন, তাদের আসনে নির্বাচন করলে উচ্চ আদালতে যাবেন। তবে ইসির নির্ধারিত সময়ে ওইসব ওয়ার্ডেও নির্বাচন হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে। এ হিসেবে ঢাকা উত্তরের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে আর দক্ষিণে একই বছরের ১৬ মে।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১। সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি এবং সংরক্ষিত ১৮টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৩৪৯ এবং ভোটকক্ষ সাত হাজার ৫১৬টি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫টি এবং সংরক্ষিত ২৫টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র এক হাজার ১২৪ এবং ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৯৯৮টি।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...