পিবিএ ডেস্ক : মুখ ফুটে কাউকে নিজের কষ্টের কথা বলতে পারেনি নাবালিকা। বলতে পারেনি, দিনের পর দিন কিভাবে তার উপর যৌন নির্যাতন চালাত তার দাদীর প্রেমিক। তাও আবার দাদীর সহযোগীতাতেই!
এর ফলে ভয়াবহ মানসিক ট্রমায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল মেয়েটি। কলকাতার বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে স্নায়ুর চিকিৎসা করাতে হয় তার। তখনই ডাক্তারদের কাউন্সেলিংয়ের সামনে দাদী ও তার প্রেমিকের কুকীর্তির কথা ফাঁস করে দেয় ইংলিস মিডিয়াম স্কুলের ওই নাবালিকা ছাত্রী।
শ্রীরামপুর মহিলা পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় দাদী ও তার প্রেমিক বিশ্বজিৎ দে’র বিরুদ্ধে। গত ২৮ নভেম্বর পকসো আইনে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওই নাবালিকার বাড়িতে হুমকি চিঠি পাঠানো হয়। হিন্দিতে লেখা কয়েক লাইনের বেনামী চিঠিতে হুমকি, মামলা তুলে না-নিলে ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে। এই ঘটনার পরেই আতঙ্কিত নাবালিকা ছাত্রী ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে চিকিৎসার জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার ফের পুলিশের দ্বারস্থ হন মেয়েটির মা। যদিও পুলিশ ভরসা দিয়েছে, নাবালিকা ও তার পরিবারের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। পুলিশ সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখছে। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি মর্মাহত ও চিন্তিত। বাড়ির মহিলাদের হাতেই ছোট মেয়েরা সুরক্ষিত নয়। এটা ভয়ঙ্কর সামাজিক অবক্ষয়। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেও কম দেওয়া হবে।’
নাবালিকা ছাত্রীর অভিযোগ, তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পরে তারা দাদীর বাড়িতে থাকতে শুরু করে। ২০১০ সালে দাদুর মৃত্যুর পরে দাদীর প্রেমিক, পেশায় তবলার শিক্ষক বিশ্বজিৎ দে সেই বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন। মেয়েটির মা দাদীর কাছে তাকে রেখে টিউশনি করতে যেত। সেই সুযোগে দাদী তার প্রেমিক বিশ্বজিতের কাছে মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিত। ওই নাবালিকার ভাষ্য এরকম, ‘আমাকে বিশ্বজিৎ নানাভাবে যৌন নির্যাতন করত। মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখাত। আমি কান্নাকাটি করলে দাদী ও তার প্রেমিক ভয় দেখাত যে, আমাকে আর আমার মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে।’
শ্রীরামপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘দাদীর প্রত্যক্ষ মদতে তার প্রেমিক নাবালিকা নাতনিকে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন করেছে। এই ক্ষেত্রে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের ছোট থেকেই শেখানো হয় যে, পরিবার আমাদের কাছে সেফ জোন। কিন্তু এখানে পরিবারের সদস্যের মদতেই নাবালিকা ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা হতে হয়েছে। অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে। আমরা আদালতের কাছে আবেদন করব, যাতে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’
পিবিএ/জিজি
