দাড়ির উপকারিতা ও না রাখার ক্ষতি

পিবিএ ডেস্কঃ গোঁফ ছোট রাখা এবং দাড়ি লম্বা রাখা মুসলমানদের ধর্মীয় প্রতীক। দাড়ি রাখা কোনো ফ্যাশন নয়, এটি ইবাদত। এটি মহানবী (সা.)সহ সব নবীর সুন্নাত। সুন্নাহসম্মত দাড়ি কোনো ব্যক্তির মুসলিম হওয়ার অন্যতম নিদর্শন।

দাড়ি রাখা ওয়াজিব

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা দাড়ি লম্বা করো এবং মোচ ছোট করো।’ দাড়িসংক্রান্ত এ বিশুদ্ধ হাদিস একাধিক হাদিসগ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) নিজেও দাড়ি রাখতেন। তাঁর দাড়ি ছিল কালো, গভীর, ঘন ও প্রশস্ত। তাঁর বক্ষ মোবারক দাড়িতে ভরে যেত। ইসলাম ধর্ম মতে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব। চার মাজহাবের কোনো মাজহাবে এ নিয়ে বিতর্ক নেই। দাড়ি রাখা সুন্নত নয়, যেমনটা এ যুগের কেউ কেউ ধারণা করেন। সুতরাং এক মুষ্টির নিচে দাড়ি কাটা বা ছাঁটা হারাম।

মুসলিমদের দাড়ি বনাম অমুসলিমদের দাড়ি

মুসলিমরা দাড়ি রাখেন আবার অনেক অমুসলিমও দাড়ি রাখেন। উভয়ের দাড়ির মধ্যে পার্থক্য হলো—এক. মুসলিমরা দাড়ি রাখেন নবীজির সুন্নাত হিসেবে আর অমুসলিমরা দাড়ি রাখেন ফ্যাশন বা শখ করে। দুই. অমুসলিমরা দাড়ি-গোঁফ উভয়টাই রাখেন আর মুসলিমরা দাড়ি লম্বা করেন এবং গোঁফ ছোট করে রাখেন। তিন. মুসলিমদের দাড়ি প্রতিবার অজু করার সময় খিলাল করার কারণে পরিষ্কার থাকে। অমুসলিমরা এমনটা করেন না। চার. মুসলিমদের অনেকে দাড়ি এক মুষ্টি হলে ছোট করেন, কিন্তু অমুসলিমরা তা করেন না। পাঁচ. অনেক মুসলিম দাড়িতে মেহেদি ব্যবহার করেন। এটি প্রিয়নবীর সুন্নাত। কিন্তু কোনো অমুসলিম দাড়িতে মেহেদি ব্যবহার করেন না। এভাবে মুসলিম ও অমুসলিমদের দাড়ির মধ্যে নানাভাবে পার্থক্য করা যায়।

দাড়ি না রাখার ক্ষতি

দাড়ি না রাখার অসংখ্য ক্ষতি রয়েছে—

এক. দাড়ি মুণ্ডানো বা ছোট করা মুশরিক, অগ্নিপূজক ও বিধর্মীদের অভ্যাস। আর মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য (বেশভূষা, আকার-আকৃতি) অবলম্বন করে, সে ওই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (জামে ছগির, ২/৮)

দুই. দাড়িবিহীন চেহারা নারীজাতির চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখে। এ ধরনের সামঞ্জস্য অবলম্বন করা হারাম।

তিন. এর ফলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা প্রদর্শন হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা জিন, ২৩)

চার. দাড়ি না রাখার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটানো হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই।’ (সুরা রুম, ৩০)

পাঁচ. দাড়ি না রাখলে অবিশ্বাসীদের অনুসরণ করা হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের ওপর। সুতরাং তুমি এর অনুসরণ করো; অজ্ঞদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না।’ (সুরা জাসিয়া, ১৮)

ছয়. দাড়ি না রাখলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।

সাত. সুরা-কেরাত শুদ্ধ থাকলেও আজান-ইকামতের যোগ্যতা ও সুযোগ থাকে না।

আট. নবীজির অন্তরে আঘাত দেওয়া হয়।

নয়. অন্যান্য পাপ একবার করলে একবারই গুনাহ লেখা হয়। কিন্তু দাড়ি না রাখলে সব সময় গুনাহ লেখা হতে থাকে। কেননা এটা গুনাহে জারিয়া বা চলমান গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

দশ. কবরে মুনকার-নাকিরের প্রশ্ন-উত্তর কঠিন হয়ে যায়।

দাড়ি রাখার ধর্মীয় উপকারিতা

এক. দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে। ফলে ভালোভাবে কোরআন তেলাওয়াত সম্ভব হয়। দুই. দাড়ি থাকলে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। অবৈধ কাজে অংশগ্রহণে লজ্জাবোধ হয়। তিন. মুমিন হিসেবে পরিচিত হওয়া যায়। নতুবা মুমিন-কাফির, পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যায়। চার. অপরিচিত স্থানে মারা গেলে মুসলমান হিসেবে সসম্মানে গোসল ও দাফন-কাফন নসিব হয়। পাঁচ. হাশরের ময়দানে রাসূলের উম্মত দাবি করা সহজ হবে এবং তাঁর সুপারিশ লাভ সম্ভব হবে।

দাড়ি রাখার দৈহিক উপকারিতা

মাওলানা আশেকে ইলাহি মিরাঠি (রহ.) তাঁর ‘ডারহি কি কদর ও হিকমত’ নামের বইয়ে লিখেছেন : ইউনানি চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক আগেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। গলা ও বক্ষকে ঠাণ্ডা ও গরম থেকে রক্ষা করে । আধুনিক ডাক্তারদের মধ্যে একজন লিখেছেন : সব সময় দাড়িতে খুর চালালে চোখের শিরার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এতে চোখের জ্যোতি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে। অন্য এক ডাক্তার লিখেছেন : দাড়ি জীবাণুকে দাড়ির ভেতরে ঢুকতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তাকে গলা, বক্ষ পর্যন্ত অতিক্রম করতে বাধা দেয়। দাড়ি না রাখা যৌনশক্তি শূন্যের কোঠায় পৌঁছে দেয়।

এক ডাক্তার লিখেছেন, যদি সাত প্রজন্ম পর্যন্ত কোনো বংশের পুরুষদের মধ্যে দাড়ি মুণ্ডানোর অভ্যাস চালু থাকে, তাহলে অষ্টম প্রজন্মের সন্তান দাড়িবিহীন হবে। এর কারণ হলো, এর ফলে প্রত্যেক প্রজন্মে যৌনশক্তি হ্রাস পেতে পেতে অষ্টম জেনারেশনে একেবারে শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাবে ।

বিবিসির এক অনুষ্ঠান—ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর—সম্প্রতি এই প্রশ্নে একটা ছোট্ট পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্লিন শেভড পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালাদের মুখে রোগ-জীবাণু বেশি, এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতাল সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা চালায়। ‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলে বলা হচ্ছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে বরং দাড়ি কামানো পুরুষের মুখেই বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্টাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটি দাড়িওয়ালাদের চেয়ে দাড়ি কামানোদের মুখে তিন গুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে। এর কারণ কী? গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা নাকি ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অন্য দিকে দাড়ি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। বিবিসির ‘ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর’ অনুষ্ঠানে বেশ কিছু পুরুষের দাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করে একই ধরনের পরীক্ষা চালানো হয়।

পিবিএ/এমএস

আরও পড়ুন...