পিবিএ, খুলনা: একদিকে বৃষ্টি, আরেকদিকে ভৈরব নদ ও রূপসা নদীর জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন নিয়ম করে শহরের অলি গলি থেকে শুরু করে তলিয়ে যাচ্ছে প্রধান সড়কও। এতে যানজটের মাত্রা যেমন বাড়ছে তেমনি নর্দমার পানিতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এমন অবস্থা খুলনা মহানগরীর অধিকাংশ এলাকা।
নদীতে জোয়ার শুরু হলে সড়কের পাশের দোকান-পাট গুলোতে ব্যস্ততা দেখা যায়। জোয়ারের পানি সড়ক ছাপিয়ে দোকান ও বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত ডুবিয়ে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে একটু বৃষ্টি হলে ভোগান্তির সীমা নেই। বৃষ্টি আর নদীর পানিতে নগরীর প্রধান সড়কে হাটু পানি হলেও নিন্মা ল কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বাসাবাড়ী, দোকান পাট, পথ ঘাট সর্বত্র পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। সম্প্রতি খুলনা মহানগরীর অপেক্ষাকৃত নিম্না লে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু রাস্তাঘাটে পানি জমে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। যথারীতি রিক্সা, ইজিবাইক চালকরা সুযোগ বুঝে ২/৩ গুন বেশি ভাড়া হাঁকে।
নগরবাসীরা মনে করছেন, বৃষ্টির পানি বেরিয়ে যাবার জন্য পানি নিস্কাশনের নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় নালা বন্ধ থাকা, সময়মত নগরীর ২২ খাল দখল উচ্ছেদ ও সংস্কার না করা, জলাধার দখল ও ভরাট থাকা, নদী দখল ইত্যাদি কারনে নগরীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ।
এছাড়া খুলনা ওয়াসার মেগা প্রকল্পের পানি সরবরাহের লাইন বসাতে বারংবার রাস্তা খোঁড়া-খুড়িতে নগরীর অধিকাংশ সড়কের বেহাল অবস্থা। মেরামত না করায় খানাখন্দ ও ছোট বড় গর্তের কারণে দুশ্চিন্তায় পরেছে নগরবাসী। বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া ভাঙা ফুটপাত আর খানাখন্দে ভরা রাস্তায় যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। বৃষ্টিতে নগরীর বেশীরভাগ রাস্তা ভেঙ্গে খাল বিলের রূপ ধারণ করেছে।
খুলনার নাগরিক নেতারা জানিয়েছেন, নদীর নব্যতা হারানোর কারণে এর তরদেশ উচু হয়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় নগরীর রাস্তা-ঘাট উঁচু হয়নি। যে কারনে জোয়ারের সময় নদীর দু’কূল ছাপিয়ে অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় পানি চলে আসছে। এ অবস্থায় ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করা ও নগরীর প্রধান খালগুলো দখলমুক্ত না হওয়ায় যে পরিমান পানি নগরীতে জমছে সে পরিমান বের হতে পারছে না। ফলে কোন কোন এলাকায় বর্ষা মৌসুমে স্থায়ি জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
কেসিসি সূত্র জানায়, মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ময়ূর নদসহ মোট ২৬টি খালে ৪৬০ জন দখলদার ও ৩৮২টি অবৈধ স্থাপনা চূড়ান্তভাবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ভূমি, নদী ও খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ, যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করাসহ পানি চলাচল নিশ্চিত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন বলেন, খুলনা নগরী ও এর আশ পাশের নদী ও খাল দখলদারদের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলেই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। এ সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করছি খাল ও নদীর দখল উচ্ছেদ হলে খুলনার জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে।
পিবিএ/ শেখ হারুন অর রশিদ/বাখ