দিনে শ্রমিক রাতে ভয়ঙ্কর ডাকাত!

পিবিএ,ঢাকা: দিনের বেলায় কেউ বাস চালক, হেলপার কেউবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অন্ধকারে তারা দুর্ধর্ষ ডাকাত! চক্রের সরদার দেলোয়ার হোসেনের নের্তৃত্বে চুরি করা একটি ট্রাক নিয়ে বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছিল।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বগুড়ার গাবতলীতে নৈশ প্রহরীদের হাত পা বেঁধে তিন মার্কেটে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চক্রের সরদারসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১২ আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ডাকাত চক্রের সদস্যরা হলেন- সরদার মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫), মো. আব্দুল হালিম মিয়া জুয়েল (২৮), আলী হোসেন (৫৬), মো. সুমন মুন্সি (২০) ও মো. হুমায়ুন কবির (৩৫)। অভিযানে গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুটি রাম দা, তিনটি শাবল, দুটি ছুরি, একটি কাঁচি, দশটি লাঠি, একটি হাতুড়ী ও একটি টর্চ লাইট ও একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ডাকাতা চক্রের সদস্যরা বগুড়ার গাবতলী থানার দূর্গাহাটা বাজারে তিনটি মার্কেটে (মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেট) ডাকাতি করে। নৈশ প্রহরীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা ও মুখ বেঁধে মার্কেটের ৯টি দোকানের তালা কেটে ডাকাতি ও মালামাল লুন্ঠণ করে। সেখান থেকে চক্রটি স্বর্ণালঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কাপড়, মোবাইলসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুটে নেয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় দোকান মালিকরা ৭ নভেস্বর গাবতলী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতি মামলা করে। ঘটনার তদন্ত শুরু করে র‍্যাব। র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলে প্রাথমিক তদন্ত, সিসিটিভি ফুটেজ ও নৈশ প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার সতস্যসের কাছ থেকে দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির সময় লুণ্ঠিত মালামালের মধ্যে স্বর্ণের ৩টি রুলি বালা, ৩টি নাকফুল, ১৫টি রুপার নূপুর, দুটি পিতলের বেঙ্গল চুড়ি, ইমিটেশনের ৩টি গলার হার, ৪টি গলার চেইন, ৩ জোড়া কানের দুল, ১টি বড় আংটি, ১টি ছোট আংটি ও ৩ জোড়া হাতের চুড়ি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠন করা বিপুল পরিমাণ বস্ত্র উদ্ধার করা হয় (৬২ পিস থ্রী-পিস, ১৪১ পিস শাড়ি, ৮৫ পিস গেঞ্জি, ৯ সেট প্যান্টের পিস, ৫টি ধুতি কাপড়, ১০টি ট্রাউজার ও ১০টি ব্যাগ)।

খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাতি করতো। তারা বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলেও সাভার ও এর আশেপাশের এলাকায় বসবাস করতো। সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতি করতো। তাদের দলের ১২/১৫ জন সদস্য রয়েছে। ডাকাতি কাজে তারা যে ট্রাকটি ব্যবহার করতো সেটিও চুরি করা ছিল। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, তালা ও গ্রীল কাটার বিভিন্ন যন্ত্র তারা ট্রাকের সামনের কেবিনে চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে রাখতো। তারা বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও মার্কেটের দোকান, শো-রুম, জুয়েলারি শপে ডাকাতি করতো। ইতোপূর্বে তারা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কালামপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিংগাইর ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে ডাকাতি করেছে বলে জানায়।

গত ৭ নভেম্বর বগুড়ার গাবতলীতে ডাকাতির ঘটনা প্রসঙ্গে তারা জানায়, ডাকাত দলের সরদার দেলোয়ারের নির্দেশে তার দলের দুজন সহযোগী গ্রেফতার হালিম ও সুমন গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর দুর্গাহাটা বাজারে যায়। এ সময় তারা মূল্যবান সামগ্রীসহ দোকান, রাত্রিকালে নৈশ প্রহরীর সংখ্যা ও অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শেষে দেলোয়ার ও কবির ডাকাতির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। দেলোয়ার ও কবির ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের একত্রিত করে ও পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাত দলের ৯ জন ঘটনার আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্রিত হয়ে বগুড়ার গাবতলীর উদ্দেশে ট্রাকে করে যাত্রা করে। যাত্রাপথে আরও কয়েকজন সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক মোট ১২ জনের এই ডাকাত দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। ডাকাতদের একটি দল বাজারে পাহারারত তিনজন নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় অপর দলটি আগে থেকে রেকি করা তিনটি মার্কেটের নয়টি দোকানের তালা ভেঙে দোকানের ভেতরে রক্ষিত মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুট করে।

ডাকাতি করে সাভারের নবীনগরে আসার সময় লুণ্ঠন করা মালামালের মধ্যে গার্মেন্টসের কাপড়ের আইটেমগুলো একটি মার্কেটে বিক্রি করে। ডাকাতি করা টিভি, মোবাইল ও অর্থ তারা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। এছাড়াও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার তারা ঘটনার পরদিন অন্য দুটি মার্কেটের জুয়েলার্সের দোকানে বিক্রি করে বলে জানায়।

গ্রেফতার দেলোয়ার হোসেন এই চক্রের সরদার। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার স্বীকার করে যে গত ৬ থেকে ৭ বছর ধরে সে ডাকাতি করছে। ডাকাতির আগে সে তার দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও পরিকল্পনা মোতাবেক বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে। তার নামে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় চারটি ডাকাতিসহ চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। ডাকাত দল ও লুণ্ঠন করা মালামাল পরিবহনে গ্রেফতার হুমায়ুন কবির একটি ট্রাক সরবরাহ করে ডাকাতিতে অংশ নেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে কবির স্বীকার করে, ডাকাতির কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই ট্রাকটি চুরি করে। তার নামে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানায় ডাকাতির একটি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার আলী হোসেন, আব্দুল হালিম ও সুমন মুন্সি দূর্গাহাটা বাজারে সংগঠিত ডাকাতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ডাকাতিকালে বিভিন্ন দোকানের তালা ভাঙা, মালামাল বস্তায় লোড ও সর্বশেষ ট্রাক লোডের কাজে সহায়তা করে।

পিবিএ/জেডএইচ

আরও পড়ুন...